বৃহস্পতিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫  |   ৩১ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮:৩৭

২০২৬ সালে ৪৭ মিলিয়ন পর্যটকের স্বপ্নে মালয়েশিয়া

আহমাদুল কবির, মালয়েশিয়া থেকে
২০২৬ সালে ৪৭ মিলিয়ন পর্যটকের স্বপ্নে মালয়েশিয়া

কুয়ালালামপুরের বিখ্যাত বুকিত বিনতাং এলাকায় দাঁড়ালে বর্তমানে এক ভিন্ন দৃশ্য চোখে পড়ে। চারদিকে আলো ঝলমলে শপিং মল, ভিড় জমিয়েছে বিদেশি পর্যটকরা। কেউ হাতে শপিং ব্যাগ, কেউ আবার ফোনে সেলফি তুলছে টুইন টাওয়ারকে পেছনে রেখে। পর্যটক দম্পতি জন এবং মারিয়া এসেছেন জার্মানি থেকে। তারা বলেন, “মালয়েশিয়ায় আসার মূল আকর্ষণ ছিলো এখানকার খাবার আর সংস্কৃতি। আমরা ল্যাংকাউই থেকে শুরু করে কুয়ালালামপুর পর্যন্ত দারুণ অভিজ্ঞতা পেয়েছি।”

এমন অভিজ্ঞতার ধারাবাহিকতাকে আরও বড়ো পরিসরে রূপ দিতে মালয়েশিয়া সরকার ২০২৬ সালে ৪৭ মিলিয়ন আন্তর্জাতিক পর্যটক আনার উচ্চাকাক্সক্ষী লক্ষ্য স্থির করেছে। ‘ভিজিট মালয়েশিয়া ২০২৬ (VM2026)’ শীর্ষক প্রচারণার মাধ্যমে দেশটিকে বিশ্বের অন্যতম প্রধান ভ্রমণ গন্তব্যে পরিণত করার পরিকল্পনা চলছে।

উপ-প্রধানমন্ত্রী দাতুক সেরি ড. আহমেদ জাহিদ হামিদি বলেন, “শক্তিশালী ব্র্যান্ডিং, কৌশলগত অংশীদারিত্ব এবং ইকোট্যুরিজম ও শপিং পর্যটনের মতো খাতগুলোতে জোর দেওয়া হবে। এর মাধ্যমেই মালয়েশিয়াকে নতুনভাবে বিশ্বের কাছে উপস্থাপন করা সম্ভব।”

পর্যটন খাতের উত্থান

পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৪ সালে মালয়েশিয়া ৩৮ মিলিয়ন বিদেশি পর্যটককে স্বাগত জানিয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৩১.১% বেশি। অভ্যন্তরীণ পর্যটনেও ভ্রমণ বেড়েছে ২৬০ মিলিয়নের বেশি, যা দেশের অর্থনীতিতে নতুন গতি এনেছে।

পর্যটন খাতের এই উত্থানে আশাবাদী স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। বুকিত বিনতাংয়ের এক রেস্তোরাঁ মালিক হাসান আলী বলেন, “মহামারীর পর পর্যটক কমে গিয়েছিল। এখন আবার ভিড় বাড়ছে। ভিজিট মালয়েশিয়া ২০২৬ সফল হলে ব্যবসার জন্যে সেটা হবে আশীর্বাদ।”

ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞদের প্রত্যাশা

ভ্রমণ শিল্প বিশেষজ্ঞ ড. লিম কিম হক মনে করেন, শুধু সংখ্যায় নয়, মানসম্পন্ন পর্যটন অভিজ্ঞতা দেওয়ার দিকেও জোর দিতে হবে। তার মতে, “আজকের ভ্রমণকারীরা শুধু দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখতে চান না, তারা সংস্কৃতি, প্রকৃতি আর মানুষের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হতে চান। মালয়েশিয়ার উচিত এই সুযোগকে কাজে লাগানো।”

অন্যদিকে খুচরা ব্যবসায়ীরা আশা করছেন ‘মালয়েশিয়া মিডনাইট সেল’-এর মতো উদ্যোগ দেশটিকে বিশ্বমানের শপিং গন্তব্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে। শপিং মলগুলোর মালিক সমিতির সভাপতি সুরাইয়া রহমান বলেন, “বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ক্রেতারা আসেন। যদি আমরা তাদের জন্যে আকর্ষণীয় অফার রাখতে পারি, তবে মালয়েশিয়ার বাজার আরও প্রাণবন্ত হবে।”

উৎসবমুখর MATTA ফেয়ার

কুয়ালালামপুরে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত MATTA ফেয়ার যেন ভিজিট মালয়েশিয়া ২০২৬-এর পূর্বাভাস দিয়েছে। তিন দিনের এ মেলায় ১ লাখ ২০ হাজারের বেশি দর্শনার্থীর পদচারণা হয়। সেখানে অংশ নিয়েছে শত শত ভ্রমণ সংস্থা, এয়ারলাইন ও পর্যটন বোর্ড।

পর্যটন মন্ত্রী দাতুক সেরি টিওং কিং সিং বলেন, “আমরা চাই মালয়েশিয়াকে টেকসই পর্যটন ও সংস্কৃতির অভিজ্ঞতার কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে। এখনকার ভ্রমণকারীরা অর্থবহ ও পরিবেশবান্ধব অভিজ্ঞতা চান।”

সামনের পথচলা

২০২৫ সালের প্রথমার্ধেই আন্তর্জাতিক পর্যটন বেড়েছে ১৭.৯% এবং অভ্যন্তরীণ পর্যটনে নতুন রেকর্ড গড়েছে। পর্যটন খাতের সঙ্গে যুক্ত সবাই এখন তাকিয়ে আছে ২০২৬ সালের দিকে।

MATTA সভাপতি নাইজেল আশাবাদী কণ্ঠে বলেন, “নতুন উদ্ভাবন, বৈচিত্র্যময় অভিজ্ঞতা এবং সরকারের প্রতিশ্রুতি এই তিনের সমন্বয়ে ভিজিট মালয়েশিয়া ২০২৬ বিশ্বকে মুগ্ধ করবে।”

মালয়েশিয়া তাই শুধু পর্যটক সংখ্যা বাড়ানোর লক্ষ্য নয়, বরং প্রতিটি আগত ভ্রমণকারীর কাছে নিজেকে একটি খাঁটি, নিরাপদ এবং সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে তুলে ধরতে চায়।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়