রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫  |   ২৮ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮:৩২

স্কুল সড়কটি জলাবদ্ধমুক্ত করা কি খুবই কষ্টকর কাজ?

অনলাইন ডেস্ক
স্কুল সড়কটি জলাবদ্ধমুক্ত করা কি খুবই কষ্টকর কাজ?

একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাওয়ার সড়কটি গত ৫ মাস ধরে জলাবদ্ধ হয়ে আছে। ইতোমধ্যেই পানি পচে দুর্গন্ধ বের হচ্ছে, মশার প্রজননের নিকৃষ্ট আবাসস্থল হয়ে উঠেছে।। সেই দুর্গন্ধযুক্ত ময়লা পানি মাড়িয়েই প্রতিদিন শত শত শিক্ষার্থীকে বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করতে হয়। স্কুল কর্তৃপক্ষ ইতঃপূর্বে এ সমস্যা সমাধানের জন্যে পৌর কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিলেও অদ্যাবধি কোনো কিছুই হয়নি। ফরিদগঞ্জ পৌর এলাকার বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন ফরিদগঞ্জ বালিকা দক্ষিণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চিত্র এটি।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, স্কুল সড়কটির পুরো অংশজুড়েই ময়লা নোংরা ও দুর্গন্ধযুক্ত পানি। পানিতে মশার লার্ভা রয়েছে। মশা প্রজননের নিৎকৃষ্ট ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। এই বিদ্যালয়ের পাশেই রয়েছে উপজেলা রিসোর্স সেন্টার (ইউআরসি)। যা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি ও গুণগত মানোন্নয়নের জন্যে প্রশিক্ষণ ও একাডেমিক সহায়তা প্রদান করে। ফলে পুরো উপজেলার শিক্ষকদেরও এই পথ মাড়িয়েই প্রতিনিয়ত যাতায়াত করতে হয়। কিন্তু চলতি বছরের এপ্রিল মাস থেকে সড়কটি পুরোপুরি চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। আরিফ, সাইফুল, আমেনাসহ অন্য স্কুলগামী শিক্ষার্থীরা জানায়, তারা এই নোংরা পানির ওপর দিয়ে বাধ্য হয়ে প্রতিদিন স্কুলে যাতায়াত করতে হয়। তাদের ভালো লাগে না। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান জানান, এই সড়কে বিগত সময়ে বর্ষাকালে পানি উঠলেও পাইপ দিয়ে ক’দিনের মধ্যেই নেমে যেতো। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দা কিরণ রাস্তার একপাশ জুড়ে বালি ফেলায় পাইপটি চাপা পড়ে গেছে। এতে গত ৫ মাস ধরে স্কুলের একমাত্র রাস্তাটি নোংরা ও দুর্গন্ধযুক্ত পানিতে পরিপূর্ণ। তাছাড়া পার্শ্ববর্তী হোটেলের পানিও এখানে জমা হচ্ছে। পৌর কর্তৃপক্ষের নিকট এই সমস্যা সমাধানের জন্যে আবেদন করা হলেও তারা এখনো পানি নিষ্কাশন ও রাস্তা উঁচুকরণের কোনো পদক্ষেপ নেয় নি। বিদ্যালয়ের এডহক কমিটির সভাপতি ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আফতাবুল ইসলাম জানান, আমরা পৌর কর্তৃপক্ষের নিকট বিষয়টি লিখিতভাবে জানিয়েছি। তারা ব্যবস্থা নেবে বলেছে। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শিরিন সুলতানা জানান, এই বিষয়টি আমরা শিক্ষা কমিটির সভায় উঠিয়েছি। আশা করছি দ্রুত এর সমাধান হবে। পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ সুফিয়ান খান জানান, পৌর প্রশাসকের সাথে স্কুলের সড়কটির বিষয়ে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ফরিদগঞ্জ বালিকা দক্ষিণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে বসবাসকারী কিরণ নামে এক ব্যক্তি স্বীয় প্রয়োজনে স্কুল সড়কের একপাশে বালি ফেলে পানি নিষ্কাশনের পাইপ চাপা দিয়ে ফেলেছেন বলে গত পাঁচ মাস ধরে এই জলাবদ্ধতা। এজন্যে প্রধান শিক্ষক পৌরসভা ও উপজেলা প্রশাসনের কাছে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করতে পারতেন। হয়তো বা করেছেনও। এজন্যে কিরণ নামের ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত আইনে ব্যবস্থাগ্রহণের সুযোগ আছে। কিরণকে জরিমানা করে কিংবা আইনের খড়গ উঁচিয়ে কিরণকে দিয়েই স্কুল সড়কটিকে জলাবদ্ধমুক্ত করা যেতো। হোটেল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেও অনুরূপ ব্যবস্থা নেয়া যেতো। কিন্তু সেটা করা হয় নি। পৌরসভা নিশ্চয়ই আর্থিক দৈন্যতা কিংবা অন্য কারণে স্কুল সড়কটিকে উঁচু করে দেবার ব্যবস্থা করতে পারে নি। এমতাবস্থায় স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াবার তাগিদে স্কুল কর্তৃপক্ষ অভিভাবক ও ইউআরসি কর্তৃপক্ষ প্রশিক্ষণার্থীদের নিকট থেকে আর্থিক অনুদান সংগ্রহ করে সড়কটিকে উঁচু করার উদ্যোগ নিতে পারতো। উপজেলা প্রশাসনের প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় তথা দুর্যোগ প্রশমন ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সহায়তা দিয়েও স্কুল সড়কটি উঁচু করার ব্যবস্থা করা যেতো। কিন্তু কাজটিকে অযথাই খুব ব্যয়বহুল ও কষ্টকর ভেবে সবাই পৌরসভার দিকেই তাকিয়ে থাকলো, আর মশার প্রজনন ক্ষেত্র হিসেবে জলাবদ্ধ স্থানকে গড়ে উঠতে সহায়তা করলো। এটা কি ঠিক হয়েছে? ক্ষুদ্র কাজের জন্যে এতোটা পরনির্ভরশীলতা ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের এতোটা দীর্ঘ সময় চুপ থাকাটা ঠিক হয়েছে?

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়