শনিবার, ০৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫  |   ৩৫ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জে কচুক্ষেত থেকে কিশোরের মরদেহ উদ্ধার

প্রকাশ : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:৩৮

ফিরে এলো বসন্তকালের প্রথম মাস

রেহানা ফেরদৌসী
ফিরে এলো বসন্তকালের প্রথম মাস

হিজরি সনের তৃতীয় মাস হলো রবিউল আউয়াল। ’রবি’ অর্থ বসন্তকাল, ‘আউয়াল’ অর্থ প্রথম; ‘রবিউল আউয়াল’ মানে প্রথম বসন্ত বা বসন্তকালের প্রথম মাস। রবিউল আউয়াল ইসলামের বর্ষপুঞ্জীর তৃতীয় মাস। এই মাসে ইসলামের শেষ নবী মোহাম্মাদ (সা.) এর জন্মদিন পালন করা হয়। এই মাসটির নাম ‘রবিউল আউয়াল’ হওয়ার কারণ হচ্ছে, প্রাক-ইসলামী আরব পঞ্জিকা অনুসারে এটি ছিলো প্রথম মাস। ইসলাম ধর্মীয় মতানুসারে, এটি একটি শুভ মাস।

প্রিয় নবীজি (সা.) এর বহুমাত্রিক স্মৃতিধন্য এই মাস মানবসভ্যতার ইতিহাসে উজ্জ্বল হয়ে আছে। মুসলিম মানসে এই মাস শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও মহিমায় পরিপূর্ণ। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) ১২ রবিউল আউয়াল দুনিয়াতে শুভাগমন করেন। ‘‘তিনি সেই মহান সত্তা যিনি পাঠিয়েছেন তাঁর দূত হেদায়েত ও সত্য ধর্মসহ সে ধর্মকে সকল ধর্মের ওপর বিজয়ী করার জন্য। সাক্ষ্য দাতারূপে আল্লাহই যথেষ্ট।’’

রিসালাতের উদ্দেশ্য, সফলতা ও পরিপূর্ণতার অতীব গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, ইসলামী ধর্মরাষ্ট্র তথা সাম্যের সমাজ প্রতিষ্ঠার সূচনা যে হিজরত, তা সংঘটিত হয়েছিল এ মাসেই। এই মাসের ১২ তারিখেই আখেরি নবীর ওফাত হয়েছিল। রবিউল আউয়াল মাসের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো পরিপূর্ণ জীবন বিধান। আল্লাহর কাছে একমাত্র গ্রহণযোগ্য ধর্ম ইসলামকে পূর্ণাঙ্গরূপে সর্বস্তরে বাস্তবায়নের মাধ্যমে সব আল্লাহদ্রোহী শক্তিকে সম্পূর্ণভাবে পরাজিত করে দিয়ে ইসলামের সাম্য ও ন্যায় সগৌরবে প্রতিষ্ঠা করা। আজ থেকে চৌদ্দশ’ বছর আগে, যখন পৃথিবী ডুবন্ত ছিল অন্ধকারের সমুদ্রে, আত্মিকতা পরাজিত হয়ে চলেছিল শয়তানতন্ত্রের কাছে, তখন মহান সৃষ্টিকর্তা তাঁর শেষ নবী এবং প্রিয়তম রাসূল হযরত মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ (সা.) কে এই পৃথিবীতে পাঠালেন, যেন তিনি হেদায়েতের জ্যোতি দিয়ে, গোমরাহির অন্ধকার ছিন্ন করে দেন এবং মিথ্যার ওপর সত্যকে বিজয়ী করে দেন। তিনি তাশরীফ আনলেন। তিনি আল্লাহর সিদ্ধান্তে পৃথিবীর রুপ পাল্টে দিলেন। বিশ্বনবী যে মাসে জন্মগ্রহণ করেন, সেটি ছিল রবিউল আউয়াল মাস এবং যখন তাঁর বয়স চল্লিশ বছর পূর্ণ হলো তখনও এই মাসেই তাঁকে সোপর্দ করা হয়েছিল জগৎশুদ্ধির কাজ। সুতরাং এ হিসেবে বলা যেতে পারে যে, রবিউল আউয়াল এই সর্বজনীন রহমত বিকাশের শুরুক্ষণ এবং এই আত্মিক কল্যাণ ও সুষমার ঝর্নাধারার উৎসমুখ। আর এ কারণেই যখন এ মাসটি আসে তখন মুসলমানদের হৃদয়ে সেই মহান অস্তিত্বের স্মরণ সজীব হয়ে উঠে।

রবিউল আউয়াল মাসটি মুসলিম সমাজে নবী করিম (সা.)-এর জন্মেরও স্মারক হিসেবে পালিত হয়, যা ‘ফাতিহায়ে দোয়াজ-দাহম’ নামে পরিচিত। ‘ফাতিহায়ে দোয়াজ-দাহম’ কথাটি ফারসি ভাষা থেকে আগত। দোয়াজ-দাহম মানে ১২, ফাতিহায়ে দোয়াজ-দাহম অর্থ হলো ১২ তারিখের ফাতিহা অনুষ্ঠান। কালক্রমে দিনটি ‘মিলাদুন্নবী (সা.)’ নামে প্রসিদ্ধ লাভ করে। এর অর্থ হলো প্রিয় নবী (সা.) এর জন্মানুষ্ঠান। ধীরে ধীরে এর সঙ্গে ‘ঈদ’ শব্দ যোগ হয়ে ‘ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)’ রূপ লাভ করে। যার অর্থ হলো মহানবী (সা.) এর জন্মোৎসব। এ পর্যায়ে আরেকটি পরিভাষাও প্রচলিত হতে থাকে ‘সিরাতুন নবী (সা.)’ অর্থাৎ নবী (সা.)-এর জীবন চরিত্র বা জীবনী আলোচনা অনুষ্ঠান।

বিশ্বনবী মোহাম্মদ (সা.) এর জন্মতারিখ নিয়ে সিরাত গ্রন্থ, জীবনীকার, ইতিহাসবেত্তা ও জ্যোতির্বিদদের মধ্যে বিস্তর মতপার্থক্য রয়েছে। তবে প্রায় সবাই এ বিষয়ে একমত যে তার জন্ম হয়েছিল রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখ সোমবার প্রত্যুষে বা ভোরবেলায় তথা ঊষালগ্নে। প্রসিদ্ধ মতে, সেদিন ছিল ৫৭০ খ্রিস্টাব্দের ২০ এপ্রিল (১২ রবিউল আউয়াল)। এবং তিনি পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নেন রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখ দ্বিতীয় সোমবার অপরাহ্ণে বা গোধূলিলগ্নে। তার ওফাত ১২ রবিউল আউয়াল হিসেবে প্রসিদ্ধ লাভ করে। প্রিয় নবী (সা.)-এর আগমন ও প্রস্থান একইদিনে, একই সময়ে এ কথাই সর্বজনবিদিত। মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর পরিচয় প্রকাশ করা। নবী-রাসূল প্রেরণের লক্ষ্য হলো মানুষকে আল্লাহর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া। তাই আল্লাহকে পেতে রাসূলাল্লাহ (অর্থাৎ আল্লাহর রাসূল) (সা.)-এর আদর্শ অনুসরণ করতে হবে। অর্থাৎ রাসূল (সা.) যা যা করেছেন বা করতে বলেছেন, তা করতে হবে। আর যা করেননি বা করতে বারণ করেছেন, তা বর্জন করতে হবে। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনের ঘোষণা, ‘যা দিয়েছেন তোমাদের রাসূল (সা.), তা তোমরা ধারণ করো; আর যা থেকে তিনি বারণ করেছেন, তা থেকে বিরত থাকো।’ (সুরা-৫৯ হাশর, আয়াত : ৭)

আরো বলা হয়েছে, ‘বলুন {হে রাসূল (সা.)} যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসবে, তবে আমার অনুকরণ করো; আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন।’ (সুরা-৩ আলে ইমরান, আয়াত : ৩১) হাদিস শরিফে আছে, ‘তোমরা কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ মুমিন হবে না, যতক্ষণ না আমি হব তার নিকট তার পিতা-পুত্র ও যাবতীয় সবকিছু হতে প্রিয়।’ (বুখারি, প্রথম খণ্ড : হাদিস : ১৩ ও ১৪) রবিউল আউয়াল মাস আত্মিক উন্নয়ন ও নবীজির আদর্শ চর্চার মাস। এই মাসে নিজেকে নবীর সুন্নাহর আলোকে গড়ে তুলতে হবে। রবিউল আউয়ালের আগমনে বিশ্বনবী (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধায় নবীজির সকল উম্মতের হৃদয় সিক্ত হোক। তাঁর দেখানো পথে হেদায়েত মিলুক। এই পবিত্র মাসে রাসূল (সা.)-এর দেখানো পথে চলতে ও তাঁর আদর্শ ধারণ করতে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি।

সকলকে রবিউল আউয়ালের শুভেচ্ছা।

রেহানা ফেরদৌসী, সহ-সম্পাদক, সমাজকল্যাণ বিভাগ, পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতি (কেন্দ্রীয় পুনাক)

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়