মঙ্গলবার, ১৯ আগস্ট, ২০২৫  |   ৩১ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ১৯ আগস্ট ২০২৫, ০৮:৪৬

‘সকলে মিলে সকলের তরে’ এ কথায় এগিয়ে যাক প্রিয় বাংলাদেশ

রোটারিয়ান মো. জাহাঙ্গীর আলম হৃদয়
‘সকলে মিলে সকলের তরে’ এ কথায় এগিয়ে যাক প্রিয় বাংলাদেশ

পদ্মা, মেঘনা, যমুনার তীরে কতো মানুষ মরে গেলো, আসে না তো ফিরে, কেউ কখনো ফিরে আসে না, যে চলে যায়। সবকিছুই স্মৃতির পাতায় লেখা হবে। দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করে ১৯৭১ সালে ৩০ লাখ মানুষের প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা আজো নিরবে কাঁদছে। কাঁদছে শহীদের আত্মা। ১৯৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ‘৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, ২০২৪-এর ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানÑসব ঘটনাই ইতিহাস হয়ে থাকবে।

বাংলার ৫৪ হাজার বর্গমাইল জুড়ে কেবল অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা। প্রতিনিয়তই বাংলাদেশের স্যাটেলাইট চ্যানেল, জাতীয় দৈনিকগুলোতে সংবাদ শিরোনামে আসছে নিহতদের লাশের খবর। বাবার হাতে পুত্র খুন, পুত্রের হাতে বাবা খুন, আবার সন্তানের হাতে মায়ের মৃত্যু, স্বামীর হাতে স্ত্রী কিংবা স্ত্রীর পরকীয়ায় স্বামী হত্যা। এসব কোনো কাঙ্ক্ষিত ঘটনা নয়। তবুও কেন যেন অনাকাঙ্ক্ষিতভাবেই বিবেকহীনভাবে আবেগপ্রবণ হয়ে স্বার্থের জন্যেই ঘটে চলেছে এমন ঘটনা।

সম্পদের লোভে চাচার হাতে ভাতিজা খুন।

আজ বিপন্ন হচ্ছে মানবতা, হারিয়ে যাচ্ছে বিবেক। প্রতিনিয়ত বাড়ছে হিংসা, অহংকার, একের প্রতি অন্যের বিরুদ্ধে আলোচনা, সমালোচনা আর প্রতিনিয়তই ঘটছে নানাবিধ ঘটনা।

ঢাকা উত্তরা মাইলস্টোন স্কুলে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত শিক্ষার্থী, আহত শিক্ষার্থীদের স্বজনদের বুকফাটা কান্না শুধু বাংলাদেশে নয়, সারা বিশ্বজুড়ে প্রকাশিত হয়েছে। রানা প্লাজা ট্রাজেডি, নিরবে কেঁদেছে অনেকেই এমন ঘটনা দেখে। যাদের মৃত্যু হয়েছে তারা তো কখনো আর ফিরে আসবে না। স্মৃতিময় মুহূর্তগুলো ফ্রেমবন্দী হয়ে থাকবে।

চাঁদাবাজ সন্ত্রাসীদের হাতে গাজীপুরে নির্মমভাবে খুন হয়েছে সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন। এমন ঘটনায় দেশ ও প্রবাসের গণমাধ্যমকর্মীদের প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন সবাই। বাংলাদেশের প্রতিটি ঘটনার বিচারের রায় দ্রুত সময়ের মধ্যে করলে দেশে অপরাধের সংখ্যা কমে আসতো।

শিক্ষার্থীরা স্কুল-কলেজে যাবে, শিক্ষার আলোয় আলোকিত হবে প্রতিটি মানুষের জীবন, অপশিক্ষা থেকে দূরে থাকবে সেটাই আমাদের প্রত্যাশা।

প্রকাশ্যে মানুষ হত্যা করার পরেও আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলায় মাধ্যমে আদালতে হাজিরা সাক্ষ্য প্রমাণের অভাবসহ নানাবিধ কারণে বিচার কার্যক্রম বিলম্বিত হয়। অনেক ক্ষেত্রে আইনের ফাঁক দিয়ে প্রকৃত আসামি বেরিয়ে যায়, নিরাপরাধরা অনেক সময় আসামি হয়ে জেলখানায় পড়ে থাকতে হয়। এ সমস্ত জায়গা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করার মধ্য দিয়ে।

সাংবাদিক দম্পতি সাগর- রুনির হত্যা মামলার অগ্রগতি আজও কেউ দেখতে পায়নি, পাবে কিনা তাও কেউ জানে না। গণমাধ্যম নেতাদের কারণেই বিচার হিমাগারে চলে গেছে বলে মনে করছেন অনেকেই। পৃথিবীর মধ্যে আশ্চর্যজনক একটি দেশ হচ্ছে বাংলাদেশ, যেখানে পুরাতন ঘটনার বিচার শেষ না হতেই নতুন ঘটনার জন্ম হয়।

যার পরিপ্রেক্ষিতে পুরাতন ঘটনার কী অবস্থা এ নিয়ে গণমাধ্যম কিংবা কেউ সচেতন থাকে না, বিচারকার্য হারিয়ে যায় নিমিষে।

কথায় কথায় দাবি নিয়ে ঢাকার রাজপথে আন্দোলন করে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করা হয়, রাস্তায় জ্যাম লাগানো হয়। এই সমস্ত ঘটনা থেকে দূরে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে সরকারিভাবে।

সুনির্দিষ্ট একটি স্থান করে দেয়া হোক, যেখানে যার যখন মনে চাইবে আন্দোলন করবে, জনগণের দুর্ভোগ করে কোনো রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠী যেন আন্দোলন করতে না পারে সে বিষয়ে সবাইকে সজাগ থাকা উচিত।

জনতার পুলিশ হিসেবে প্রশাসন কাজ করবে, দেশের উন্নয়ন অগ্রগতিতে ভূমিকা রাখবেÑসেটাই সকলের চিন্তা হওয়া উচিত।

পৃথিবীর অন্যান্য দেশে সময় লস করে কথায় কথায় দাবি নিয়ে রাস্তায় নেমে আসতে দেখা যায় খুবই কম। নুন থেকে চুন খসলেই রাস্তায় নেমে আসতে দেখা যায় আমাদের দেশে, এটি একমাত্র বাংলাদেশেই সম্ভব হচ্ছে।

একের পর এক নতুন ঘটনার জন্মদানকারী দেশ আমাদের সোনার বাংলাদেশে সকল হত্যার বিচার হবে, রাজনৈতিক সম্প্রীতিময় একটি দেশ হবে, গণতান্ত্রিক চর্চা হবে, মানুষের অধিকার ফিরে পাবে, মুখে নয় বাস্তবায়নের মধ্য দিয়েই সাধারণ মানুষ তার কথা বলার অধিকার পাবে,

খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা সহ মানুষ তার মৌলিক অধিকার ফিরে পাবে, সরকারিভাবে সকল সুবিধা পাবে সেটাই প্রত্যাশা।

সকল শ্রেণী-পেশায় নিয়োজিত মানুষের সাথে মানুষের সম্প্রীতি গড়ে উঠবে, ভালোবাসা থাকবে অটুট। ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যাবে, বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রগতিতে ভূমিকা রাখবে সেটাই সকলের চাওয়া।

হত্যা, খুন, রাহাজানি, মারামারি, রাস্তা বন্ধ করে মিছিল, মিটিং নিষিদ্ধ হবে, সাধারণ মানুষের কষ্ট দূর হবে, সড়ক দুর্ঘটনা বন্ধ হবে, মানুষ নিরাপদে বাড়ি ফিরবে। লাশের মিছিলে বাংলাদেশে স্বজনহারা মানুষের আর্তনাদ দেখতে চাই না। ‘সকলে মিলে সকলের তরে’ এই কথার মধ্য দিয়েই এগিয়ে যাক প্রিয় বাংলাদেশ।

লেখক পরিচিতি : প্রবাসী গণমাধ্যমকর্মী ও সাংস্কৃতিক সংগঠক; প্রবাসী চাকরিজীবী, রিয়াদ, সৌদি আরব।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়