বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই, ২০২৫  |   ২৮ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ২৩ জুলাই ২০২৫, ০৯:১৩

সাফল্যের প্রতিভাসে মৌমিতা আচার্যীর সুরের পথচলা

চাঁদপুর থেকে কলকাতা এবং তারপর

কবির হোসেন মিজি
সাফল্যের প্রতিভাসে মৌমিতা আচার্যীর সুরের পথচলা

চাঁদপুরের মাটিতে জন্ম নেওয়া সংগীত শিল্পী মৌমিতা আচার্যী শৈশব থেকেই গানকে ভালোবেসেছেন। তাঁর নিরবিচ্ছিন্ন সাধনা আর অন্তরের গভীর থেকে উৎসারিত সুরের মাধুর্য তাঁকে নিয়ে গেছে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে, পৌঁছে দিয়েছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। চাঁদপুরের সন্তান মৌমিতা আচার্যী ছোটবেলায় শিল্পকলা একাডেমি আর বিজয় মেলার মঞ্চে গান গেয়ে যেভাবে দর্শক-শ্রোতাদের মন জয় করেছিলেন, সেই একই ভালোবাসা আর একাগ্র সাধনার ফলেই তিনি আজ বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের তালিকাভুক্ত শিল্পী।

মাত্র চারটি মৌলিক গানের ভাণ্ডার হলেও তাঁর কণ্ঠে আছে স্বকীয়তা, যা প্রকাশিত হয়েছে বাংলাদেশের বেসরকারি চ্যানেল ২৪, যমুনা টিভি, বাংলা ভিশন ও ভারতের তারা টিভির মতো জনপ্রিয় চ্যানেলে। গানের প্রতি সেই শৈশবের ভালোবাসাই তাঁকে আজ নিয়ে গেছে কলকাতার প্রখ্যাত রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে, যেখানে তিনি বাংলা গানে উচ্চতর শিক্ষায় নিজেকে আরও শাণিত করেছেন।

আজকের এই বিশেষ দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে আমরা জানবো কণ্ঠশিল্পী মৌমিতা আচার্যীর গানকে ঘিরে তাঁর সংগ্রাম, স্বপ্ন, অনুপ্রেরণা ও ভবিষ্যতের পরিকল্পনা, যেখানে শুধু সুর নয়, আছে চাঁদপুরের মাটির গন্ধ আর শিল্পীর অন্তরের কথা।

সংস্কৃতি অঙ্গন : আপনার শৈশবের সংগীতজীবন শুরু হয়েছিল কীভাবে? প্রথম গান শেখা বা স্টেজে ওঠার স্মৃতিটা কেমন ছিলো?

মৌমিতা আচার্যী : যতদূর আমার মনে পড়ে, আমার সঙ্গীত জীবন শুরু হয়েছিলো ক্লাস ফোর থেকে। পরিবারের সদস্যরা সবাই কম-বেশি গান ভালোবাসতো ও সাহিত্য চর্চা করতো। আজ মনে পড়ে যাচ্ছে, ছোটবেলায় আমার কাকার কাছে প্রথম রবীন্দ্র সংগীত শিখেছিলাম, যেটা আমি খালি গলায় গেয়ে একটা কম্পিটিশনে প্রথম স্থান অধিকার করেছিলাম। তখন থেকেই আমার একটা আগ্রহ সৃষ্টি হলো যে, এটার পেছনে যদি আমি সময় দেই আমি কিছু করতে পারবো। তারপর থেকে আমার সঙ্গীতের ওপর কিছু করার মন মানসিকতা তৈরি হয় এবং শুধু আমারই নয়, আমার পরিবারেরও আগ্রহ বাড়ে। তারপর আমি ক্লাস সেভেন থেকে পুরোদমে শঙ্কর আচার্যী স্যারের কাছে সংগীত শেখা শুরু করি।

সংস্কৃতি অঙ্গন : চাঁদপুর শিল্পকলা একাডেমি এবং বিজয় মেলার মঞ্চ, এই দুটি জায়গা আপনার সংগীতচর্চায় কীভাবে ভূমিকা রেখেছে?

মৌমিতা আচার্যী : অনেক অনেক পরিবেশনার সাক্ষী এই মঞ্চ দুটি। প্রথমত শিল্পকলা একাডেমীতে প্রচুর প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হতো। আমি আমার প্রথম প্রতিযোগিতায় তিনটা বিষয়েই প্রথম হয়েছিলাম, যার পেছনে আমার শঙ্কর স্যারের অবদান অনেক। আমার এখনো মনে পড়ে, আমার প্রতিযোগিতার বিচারক ছিলেন রূপালী চম্পক, কৃষ্ণা সাহা, ইতু চক্রবর্তী ও প্রয়াত তাহমিনা হারুন। আর বিজয় মেলার মঞ্চে বহুবার গান পরিবেশন করেছি। আমার কাকা প্রয়াত মনোজ আচার্যীর সাথে ‘স্বদেশ’-এর অনুষ্ঠানে অনেক বার গিয়েছি। এ ছাড়াও শিল্পকলার পক্ষ থেকে বিজয় মেলার মঞ্চে বহুবার অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছি। এই মঞ্চের সকলের উৎসাহ আমার সংগীত যাত্রার অনুপ্রেরণা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। আরেকজনের কথা না বললেই নয়, সেটা হলো মৃণাল স্যার, তাঁর সংগীত আয়োজনে অনেক জায়গায় পরিবেশনা করার সুযোগ হয়েছে। যেমন সার্কিট হাউজের প্রোগ্রাম, চাঁদপুরের বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রোগ্রাম ইত্যাদি।

সংস্কৃতি অঙ্গন : রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পেছনে অনুপ্রেরণা কী ছিলো? কেন এই বিশ্ববিদ্যালয়কে বেছে নিলেন?

মৌমিতা আচার্যী : রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় একটি এমন প্রতিষ্ঠান, যেখানে শিক্ষার সঙ্গে মিশে আছে সংস্কৃতি, ইতিহাস ও আত্মিক পরিশুদ্ধি। এটি শুধুমাত্র ডিগ্রি লাভের জায়গা নয়, বরং এক মানবিক ও সৃজনশীল শিক্ষা চর্চার ক্ষেত্র। আমার কাছে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় একটি সাংস্কৃতিক বাতিঘর, যা মূলত কলা, সংগীত, নৃত্য, নাট্য এবং সামাজিক বিজ্ঞান শিক্ষায় বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এটি ১৯৬২ সালের ৮মে প্রতিষ্ঠিত হয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে, তাঁর জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতেই এর সূচনা হয়।

আমার প্রথম ইচ্ছে ছিলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংগীত নিয়ে পড়াশুনার, কিন্তু বহু কারণেই আমার সেখানে পরীক্ষা দেওয়া হয়ে উঠে নি। পরবর্তীতে আমার বিবিএ শেষ করে যখন সুযোগ পেলাম আইসিসিআর স্কলারশিপের মাধ্যমে, তখন চলে যাই পড়তে। কারণ এটা আমার স্বপ্নের চেয়েও বড়ো ছিলো। আর রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার অনুপ্রেরণা আমার স্বামীর থেকেই বেশি পেয়েছিলাম। তিনি সবসময় আমাকে সাপোর্ট করে এসেছেন।

সংস্কৃতি অঙ্গন : দেশ থেকে দূরে গিয়ে সংগীতচর্চা করা--এক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা কেমন? কোন্ কোন্ বিষয় সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জিং মনে হয়েছে?

মৌমিতা আচার্যী : সংগীতের আঁতুর ঘর বলা হয় ভারতবর্ষকে, সেই জায়গায় সংগীত চর্চার অভিজ্ঞতা ছিলো সত্যিই অনন্য। শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের ধারাগুলো সম্পর্কে জানতে পারা, অজানা কতোগুলো বিষয় জানা সত্যিই অনেক আনন্দের বিষয় ছিলো। এটা চ্যালেঞ্জিং লাগতো যে, প্রথম প্রথম অনেক বিষয়ে আমি পিছিয়ে ছিলাম। আর ভাবতাম, ছোটবেলা থেকে যদি এই শিক্ষাটা পেতাম, তাহলে আরো ভালো করতে পারতাম। আর শুরুর দিকে কঠিন মনে হচ্ছিল এবং মনে হচ্ছিল যে পারবো কিনা। কিন্তু ওখানকার শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং আমার সহপাঠীরা এতো সাপোর্টিভ ছিলো যে, পরবর্তীতে আমার এই কঠিন যাত্রাটিকে তারা তাদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে অনেক সহজ করে দিয়েছিলো।

সংস্কৃতি অঙ্গন : আপনার সংগীতে রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলগীতি, লোকগীতি, কোন্ ধারা সবচেয়ে আপন মনে হয়? কেন?

মৌমিতা আচার্যী : আসলে সুর মানেই খুব আপন আমার কাছে। সেটা গানের যে ধারারই হোক না কেনো। রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনলে মনে হয় প্রার্থনা শুনছি, আর প্রতিটি গানের বাণী শুনলেই মনে হয় আমার জীবনের সাথে কোনো না কোনো মিল পাই। যেন আমার অব্যক্ত কথাগুলো শুনতে পাই। বাংলা সংগীতের ইতিহাসে নজরুল সংগীত একটি বিশিষ্ট ও সমৃদ্ধ ধারাকে উপস্থাপন করে। নজরুল সংগীতের যে জিনিসগুলো আমার মন কাড়ে তা হলো এর বিদ্রোহী ভাষা, গভীর মানবতাবোধ, প্রেম, প্রকৃতি, সমাজচেতনা, ধর্মীয় সমতা এবং সামাজিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের মিশ্রণ। আর শাস্ত্রীয় সংগীত মূলত ধ্যান, ভাব, ও আবেগ প্রকাশের মাধ্যম, যেখানে সুর ও ছন্দে গভীর মনোনিবেশের মাধ্যমে সংগীত পরিবেশন করা হয়। এটি দীর্ঘ সাধনা ও অনুশীলনের ফল এবং সাধারণত গুরু-শিষ্য পরম্পরায় শেখানো হয়। যার কিছুটা শিখতে পেরেছিলাম কলকাতা থাকাকালীন সময়ে, এখনো শিখে চলছি। যদিও এর কোনো সীমা নেই, সারা জীবনও কম পড়বে এর এক ভাগ শিক্ষা গ্রহণ করতে।

আর লোকসংগীত তো সাধারণ মানুষের জীবন-যাপন, সংস্কৃতি, বিশ্বাস ও আবেগের সরল ও আন্তরিক প্রকাশ। এটি কোনো নির্দিষ্ট রচয়িতা বা সুরকারের গান নয়, সময়ের সাথে সাথে মৌখিকভাবে তৈরি ও পরিবাহিত হয়ে আসা সংগীতধারা। বাংলার লোকসংগীত বাংলা সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ ও প্রাণবন্ত অংশ। এটি মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে, এর সুর সহজ সুন্দর ও কথায় মাটির গন্ধ থাকে। বাউল, ভাটিয়ালী, ভাওয়াইয়া, মারফতি প্রভৃতি গান আমাদের জীবনের কথা দিয়েই তৈরি। তার জন্যে সংগীতের সব ক’টি ধারাই আমার খুব কাছের, তবে আমি সেমি ক্লাসিক্যাল, নজরুল সংগীত, আধুনিক গান এই ধারাগুলোতে গান করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি।

সংস্কৃতি অঙ্গন : রবীন্দ্রভারতীতে পড়াশোনার সময় যেসব নতুন বিষয় শিখছেন, সেগুলো কি ভবিষ্যতে বাংলাদেশে ব্যবহার করতে চান?

মৌমিতা আচার্যী : রবীন্দ্রভারতীতে পড়াশোনা করার সময় অনেক নতুন নতুন বিষয়ের অভিজ্ঞতা হয়েছে। সে এক অভিনব অভিজ্ঞতা যা কখনোই আমার মানসপট থেকে বিস্মৃত হবে না। এখানে সংগীতের বিভিন্ন রকম ধারা সম্পর্কে জানতে পারি, যেমন খেয়াল, ধ্রুপদ, কীর্তন, ঠুমরী, সাদরা, কাজরি, চৈতী, দাদরা, টপ্পা, পুরাতনী বাংলা গান, আখড়াযই গান-এর সাথে রবীন্দ্র সংগীত, নজরুল সংগীত, পঞ্চকবির গান, লোকগান আর আধুনিক গান তো আছেই। মোটকথা সব গানের বিস্তৃত রূপ জানতে তো এই এক জীবন কম পড়ে যাবে, তবে একটু একটু ধারণা সব কিছুরই নিয়ে আসতে পেরেছি।

সংস্কৃতি অঙ্গন : আপনার মতে, আজকের তরুণ প্রজন্ম সংগীতের কোন্ কোন্ দিকটায় বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছে? সেই প্রবণতাকে আপনি কীভাবে দেখেন?

মৌমিতা আচার্যী : আজকে তরুণ প্রজন্মকে আমি দেখছি তারা রক, পপ গানের পাশাপাশি মার্গ সঙ্গীত বা শাস্ত্রীয় সংগীতের দিকেও ধাবিত হচ্ছে। এটা আমার কাছে খুব ভালো লাগছে, কারণ বর্তমানে ছায়ানটের মতো প্রতিষ্ঠানে যেখানে মার্গ সংগীতের চর্চা তথা রবীন্দ্র, নজরুল, পঞ্চ কবি, লোক গান সকল ধারার চর্চা খুব ভালোভাবে হচ্ছে, যেখানে অনেক অনেক তরুণ প্রজন্মকে দেখতে পাচ্ছি আর ভীষণ ভালো লাগছে। আমি খুব আশাবাদী এই তরুণ প্রজন্মকে নিয়ে, যারা গান নিয়ে পড়াশোনা করার কথা ভাবছে এবং গানকে, গানের শিকড়কে আরো আরো বিস্তৃত করার চিন্তা ভাবনা করছে।

সংস্কৃতি অঙ্গন : আপনার সংগীত জীবনে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড়ো অর্জন কোনটি বলে মনে করেন?

মৌমিতা আচার্যী : সংগীত আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে! কী দেয় নি সেটা জিজ্ঞেস করুন। আমি আজকে যেটুকু বা যতোটুকুই--সবটাই আমার সঙ্গীতের জন্যে, আমি অকৃতী অধম বলেও তো কিছু কম করে মোরে দাওনি, আর যদি জীবনের সবচেয়ে বড়ো প্রাপ্তি বলতে পারি, তাহলে এটা বলতে পারি যে, বিদেশের মাটিতে আমি আমার দেশকে সম্মানিত করতে পেরেছি। যখন আমি আমার কণ্ঠসঙ্গীত বিভাগে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হই এবং ভারতের রাজ্যপালের উপস্থিতিতে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের হাত থেকে অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করি। এটা আমার সংগীত জীবনের সবচেয়ে বড়ো প্রাপ্তি। এখানে আমার নিষ্ঠা আমার ডেডিকেশনের ফল আমি পেয়েছিলাম। এছাড়াও আমার কয়েকটি নিজস্ব মৌলিক গান আছে, এটাও আমার অনেক বড়ো প্রাপ্তি বলে আমি মনে করি। তবে নিজের গান শুনে নিজের সন্তুষ্টি যেদিন আসবে সেটাই হবে সেরা প্রাপ্তি।

সংস্কৃতি অঙ্গন : ভবিষ্যতে আপনি নিজের সংগীতচর্চাকে কোন্ দিকে নিয়ে যেতে চান, পারফরমিং আর্টিস্ট হিসেবে, না কি শিক্ষক বা গবেষক হিসেবে?

মৌমিতা আচার্যী : ভবিষ্যতে আমার সংগীত জীবনকে আমি শিক্ষকতা এবং গবেষণার দিকে নিয়ে যেতে চাই। আমি এখনো একটা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতায় আছি। বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর শাহীন কলেজ কুর্মিটোলার সঙ্গে শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত আছি, আর আমার নিজস্ব একটা ছোট প্রতিষ্ঠান চালাচ্ছি। এছাড়াও ইচ্ছা আছে সংগীতকে নতুন প্রজন্মের কাছে আরো আরো ছড়িয়ে দেওয়ার। আর হ্যাঁ মার্জিত রুচি সম্মত অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করার ইচ্ছা আছে, আর প্লেব্যাক করার ইচ্ছা আছে।

সংস্কৃতি অঙ্গন : সংগীতচর্চা করতে গিয়ে পরিবার, সমাজ বা শিক্ষাব্যবস্থা থেকে কি কখনো বাধার সম্মুখীন হয়েছেন? কীভাবে সামাল দিয়েছেন?

মৌমিতা আচার্যী : সংগীত চর্চার এই জার্নিতে আমি আমার পরিবার এবং সমাজের থেকে সবসময়ই উৎসাহ এবং অনুপ্রেরণা পেয়ে এসেছি। যেন আমি আরোতরভাবে আমার সঙ্গীতটাকে যাপন করতে পারি। তবে হ্যাঁ, ইন্ডিয়াতে যখন পড়াশোনা করতে যাই, তার আগে পরিবার থেকে একটু বাধা এসেছিলো, কিন্তু পরবর্তীতে সেটা মিটে যায়। তবে উৎসাহিত হয়েছি বেশি।

সংস্কৃতি অঙ্গন : বাংলাদেশের বাইরে থেকে বাংলা গান নিয়ে কী ধরনের আগ্রহ লক্ষ্য করেন? বিদেশিদের দৃষ্টিতে আমাদের সংগীত কেমন?

মৌমিতা : বাংলাদেশের বাইরে ও বাংলা গান নিয়ে যথেষ্ট কাজকর্ম হয়, আর আমি যেখানে পড়াশোনা করতাম সেটা তো পশ্চিমবঙ্গ এবং সেটা বাংলারই আরেকটি শাখা, তাই আমার তেমন কোনো পার্থক্য লাগেনি। সেখানেও রবীন্দ্র, নজরুল, দেশাত্মবোধক, লোকগান, পঞ্চকবির গান এরকম অনেক ধারার গান চর্চা হয়। তবে সেখানে আরেকটি ধারা আছে, যেটা হচ্ছে পুরাতনী বাংলা গানের ধারা, যেগুলোতে বাংলা গানের অনেক অনেক শাখা-প্রশাখা সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে পেরেছিলাম। আর বিদেশীদের চোখে বাংলা গান বলতে মাটির গান আমাদের লোকসংগীতকে বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়। বাংলাদেশের পরিবেশ, আবহাওয়া, নদী-নালা খাল-বিল এ সমস্ত কিছু লোকসংগীতের ওপর বিস্তর প্রভাব বিস্তার করে এবং যার কারণে তারা মনে করেন যে, আমরা বাংলাদেশীরা লোকসংগীতটা বেশি ভালোভাবে গাইতে পারি এবং তারা আমাদের বাংলাদেশের লোকসংগীতের অনেক বড়ো ভক্ত। বিশেষ করে আমাদের বিভিন্ন অঞ্চলের আঞ্চলিক গানগুলো তারা খুব ভালোবাসে।

সংস্কৃতি অঙ্গন : একজন নারী শিল্পী হিসেবে আপনাকে কখনো বিশেষ কোনো চ্যালেঞ্জ বা বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে কি?

মৌমিতা আচার্যী : মিডিয়া জগতে কাজ করার ক্ষেত্রে নারী শিল্পীরা অনেক রকম সমস্যার সম্মুখীন হয়। যদিও এখন সে সমস্ত সমস্যা অনেক কম দেখা যাচ্ছে এবং মানুষ ভালো কাজের দিকে ঝুঁকছে। এটা একটা পজিটিভ দিক বলে আমি মনে করি। ছোটখাট অনেক চ্যালেঞ্জেরই তো সম্মুখীন হতে হয়, তবে মনের জোর আর আত্মবিশ্বাসের দ্বারা এগুলোকে ওভারকাম করা লাগে।

সংস্কৃতি অঙ্গন : চাঁদপুরের সংস্কৃতি অঙ্গনকে আপনি ভবিষ্যতে কীভাবে দেখতে চান? কী উন্নতি হওয়া উচিত বলে মনে করেন?

মৌমিতা আচার্যী : চাঁদপুরের সংস্কৃতি অঙ্গনকে ভবিষ্যতে আরও সমৃদ্ধ, সৃজনশীল এবং প্রগতিশীল রূপে দেখতে চাই। চাঁদপুর ঐতিহ্য, নদী-নির্ভর জীবন-যাপন ও লোকসংস্কৃতিতে ভরপুর একটি জেলা। এই জায়গাটিকে সাংস্কৃতিকভাবে আরও জাগ্রত ও আধুনিক করার জন্যে কিছু দিক উন্নয়ন করা জরুরি বলে মনে করি।

সংস্কৃতি অঙ্গন : নতুন প্রজন্মের তরুণদের জন্যে আপনি কী বার্তা দিতে চান, যারা সংগীতকে পেশা হিসেবে নিতে চায়?

মৌমিতা আচার্যী : নতুন প্রজন্মের শিল্পীদের উদ্দেশ্যে একটা কথাই বলবো, যদি তোমাদের শিল্প-সংস্কৃতির দিকে মন ঝুঁকে বেশি, তোমরা অবশ্যই সেটাকেই বেছে নিবে। কারণ তুমি যদি তোমার পছন্দের কাজটাকে পেশা হিসেবে নাও তাহলে সেই কাজটা বেশি ভালো হবে। কারণ যে কাজটা আমাদের করতে ভালো লাগবে সেটার আউটপুটও খুব ভালো আসবে। তাই জীবনে অনেক টাকা পয়সা বাড়িগাড়ি করাটাই সফলতা নয়, জীবনে সন্তুষ্ট হয়ে কাজ করাটাই সফলতা। আর তুমি তখনই সন্তুষ্ট হবে যখন তুমি তোমার পছন্দের কাজটাকে পেশা হিসেবে নেবে। তাই বর্তমানে শিল্প সংস্কৃতিতে কাজের ক্ষেত্র অনেক বেড়েছে, সে আলোকে নতুন প্রজন্মকে বলবো, তোমরা সংগীত নিয়ে এগিয়ে যাও, শিল্প-সংস্কৃতির সাথে এগিয়ে যাও, নিজের শিকড়কে কখনো ভুলে যেও না যত ওপরেই উঠে যাও না কেন।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়