বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই, ২০২৫  |   ৩১ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ২৩ জুলাই ২০২৫, ০৯:১০

ছাতিম তলার আড্ডা : সংস্কৃতিকর্মী, কবি-সাংবাদিকদের প্রাণকেন্দ্র

সাইফুল ইসলাম সিফাত
ছাতিম তলার আড্ডা : সংস্কৃতিকর্মী, কবি-সাংবাদিকদের  প্রাণকেন্দ্র

চাঁদপুর শহরের মিশন রোডের রেলক্রসিং পার হলেই যে ছায়াঘেরা আড্ডাখানা চোখে পড়ে, সেটি এখন শহরের সংস্কৃতি অনুরাগী মানুষদের কাছে অতি পরিচিত ‘ছাতিম গাছতলা’। বিশাল ছাতিম গাছটির সবুজ পাতার ছায়ায় প্রতিদিন ভরে উঠে কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক আর সৃষ্টিশীল মানুষের প্রাণের স্পন্দন।

ছাতিম গাছতলার আড্ডা শুরু হয় বিকেলের পড়ন্ত আলোয়। তারপর গল্পের পর গল্পে ডুবে যায় সময়। রাত বাড়তে থাকে, কিন্তু থামে না চায়ের কাপে চুমুক আর টুংটাং শব্দের সুর। কখনো রাত ১২টাও পেরিয়ে যায় এই আড্ডাবাজির নেশায়।

ছাতিম গাছতলার জন্ম : জায়গাটি চাঁদপুরবাসীর কাছে আলাদা পরিচিতি পায় সম্ভবত ২০২৪ সালের জুন মাসের মাঝামাঝি সপ্তাহে, যখন কবি, গীতিকার, লেখক ও সাংবাদিক কবির হোসেন মিজি এক বিকেলে এই স্থানটি খুঁজে নেন আড্ডার উপযুক্ত আস্তানা হিসেবে। তারপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। অল্প ক’দিনেই এটি হয়ে উঠে চাঁদপুরের কবি-সাহিত্যিক ও সাংবাদিক সমাজের প্রাণকেন্দ্র।

এই আড্ডার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে কাদিরের চা দোকানের চায়ের গন্ধ আর কাপের টুংটাং শব্দ। এটি যেন আড্ডার অবিচ্ছেদ্য অংশ।

ছাতিমতলায় জমে ওঠা আড্ডা কেবল গল্পগুজবের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না। এখানে আলোচনা হয় সাহিত্য, সংস্কৃতি, গণমাধ্যম, শিক্ষা, রাজনীতি, খেলাধুলা, জেলার সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে। অনেক সময় এসব আড্ডা থেকেই জন্ম নেয় নতুন লেখা, নতুন গান কিংবা সাহসী রিপোর্টের পরিকল্পনা।

চাঁদপুরের প্রায় সব প্রজন্মের সংবাদকর্মী, কবি, সাহিত্যিক, লেখকরা এই জায়গাটিকে আপন করে নিয়েছেন। সাংবাদিক মনিরুজ্জামান বাবলু, শরিফুল ইসলাম, আশিক বিন রহিম, সালাম আজাদ জুয়েল, তালহা জুবায়ের, শাওন পাটোয়ারী, ইয়াসিন ইকরাম, আরিফুল ইসলাম শান্ত, লেখক এইচ এম জাকির হোসেন সহ সবাই কোনো না কোনো বিকেলে এসে বসেছেন এই ছায়াতলে।

ছাতিমতলা শুধু আড্ডার নয়, অনেক আনন্দঘন মুহূর্তেরও সাক্ষী। এখানে কাটা হয়েছে কবি, সাহিত্যিক ও সাংবাদিকদের জন্মদিনের কেক। ক’মাস আগেই এই ছাতিম তলায় উদযাপিত হয়েছিল কাদের পলাশ, কবির মিজি ও বোরহান উদ্দিন ডালিমের জন্মদিন। সেই সন্ধ্যা সাক্ষী থেকেছে কবিতা আবৃত্তি, গানের সুর আর বন্ধুত্বের উষ্ণতার।

এই ছাতিম গাছ যেন চাঁদপুরের সৃজনশীল মানুষের মাথার ওপর নির্ভরতার প্রতীক।

যান্ত্রিক জীবনের ক্লান্তি ভুলে যেতে এখানকার আড্ডা হয়ে উঠেছে তাদের অবলম্বন। আমি নিজেও মাঝেমধ্যে হাজীগঞ্জ থেকে ছুটে যাই ছাতিমতলায়। সেখানে না গেলে তৃপ্ত হয় না মন।

ছাতিম গাছতলা এখন চাঁদপুরের সাংস্কৃতিক ইতিহাসের অংশ হয়ে গেছে। প্রতিদিনের শেষে সেখানে জড়ো হয় কিছু স্বপ্নবাজ মানুষ। তাদের চায়ের কাপে ভাসে নতুন দিনের ভাবনা, নতুন গল্পের বীজ।

ছাতিমতলার আড্ডা শুধু একটি জায়গা নয়, এটি হয়ে উঠেছে মুক্তচিন্তার আসর, সৃষ্টির উর্বর ভূমি, বন্ধুত্বের ঠিকানা। চাঁদপুরের সাহিত্য ও সাংবাদিকতা অঙ্গনের ইতিহাসে এই ছাতিম গাছের ছায়া অম্লান থাকবে বহুকাল। লেখক : সংবাদকর্মী ও সমাজকর্মী

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়