সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১১ জিলকদ ১৪৪৫  |   ৩২ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   এসএসসি সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ

প্রকাশ : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০

সহ-পাঠক্রমের দক্ষতা পাঠদানে বেশ কাজে লাগে
নারীকণ্ঠ প্রতিবেদক ॥

গুণী ও মেধাবী শিক্ষার্থী ফাতেমাতুজ-জোহরা এখন জীবিকার প্রয়োজনে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। তার কর্মস্থল বাবুরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এখানে ২০১৮ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর তিনি যোগদান করে সুনামের সাথে পাঁচ বছর কর্মরত আছেন। শিক্ষাজীবনে সহ-পাঠক্রম কার্যক্রমে তার বহু কৃতিত্ব রয়েছে। সেই কৃতিত্বপূর্ণ দক্ষতা বর্তমান কর্মস্থলে পাঠদানে বেশ কাজে লাগে। সেজন্যে শিক্ষকতা বেশ উপভোগ করছেন। কর্মস্থলের পরিবেশও খুব ভালো। ১৫ জন শিক্ষকের মধ্যে প্রধান শিক্ষকসহ ৩ জন পুরুষ শিক্ষক, আর ১২ জনই নারী শিক্ষক।

ফাতেমা ২০১৬ সালে জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহে জেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থী হয়ে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন। চাঁদপুর সরকারি কলেজে উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সেরা ছাত্রী ছিলেন তিনি। ২০১৪ সালে প্রথম শ্রেণীতে অনার্স পাস করে পরবর্তীতে মাস্টার্সও পাস করেন অনুরূপ ফলাফলে। সম্প্রতি প্রকাশিত হলো ডিপিএড (ডিপ্লোমা ইন প্রাইমারি এডুকেশন) পরীক্ষার ফলাফল। সেখানেও তার কৃতিত্বের ছাপ। তিনি হাজীগঞ্জের আলীগঞ্জ প্রাইমারী ট্রেনিং ইনস্টিটিউট থেকে এই পরীক্ষায় অংশ নিয়ে প্রথম শ্রেণি (জিপিএ-৩.৭৫) পেয়েছেন এবং ৩৯৭ জনের মধ্যে মেধা তালিকায় দশম হয়েছেন।

চাঁদপুর কণ্ঠের ‘নারীকণ্ঠে’র মুখোমুখি হয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ফাতেমাতুজ-জোহরা বলেন, বর্তমান শিক্ষকতা পেশাকে আমি ভালোই উপভোগ করছি। প্রাথমিক শিক্ষায় আটটি ক্ষেত্রে শিশুর বিকাশের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। যেমন-শারীরিক, মানসিক, সামাজিক, নৈতিক, মানবিক, নান্দনিক, আবেগিক ও আধ্যাত্মিক। প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্যানুযায়ী এই ৮টি ক্ষেত্রের বিকাশ পরিপূর্ণ করতে, এসডিজি টার্গেট বাস্তবায়ন করতে, শিখন-শেখানো কার্যক্রম আনন্দদায়ক করতে, সার্বজনীন মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়ন করতে, একজন শিশুর সুকুমার বৃত্তির পূর্ণাঙ্গ বিকাশ ঘটাতে বর্তমান শিক্ষকতা জীবনে আমার শিক্ষাজীবনের সহ-পাঠক্রম (কো-কারিকুলার) কার্যক্রমে যে সক্রিয়তা ও কৃতিত্ব ছিলো, সেটি ভালোই কাজে লাগাতে পারছি। প্রতিটি বিষয়ভিত্তিক ক্লাসে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ আকর্ষণের জন্যে গান, কবিতা, চিত্রাঙ্কন, অভিনয় ইত্যাদি দক্ষতা প্রয়োগে আমি সাফল্য খুঁজে পাই।

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা পাসের পর মৌখিক পরীক্ষায় আমি যে বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী সে বিষয়ে প্রশ্নের বাইরে সহ-পাঠক্রমের বিষয় (আবৃত্তি, নৃত্য ও গান)-এর ওপর অনেক প্রশ্নের জবাব দিতে হয় ও ব্যবহারিক দিকও দেখাতে হয়। এমনটি অন্যান্য পদের মৌখিক পরীক্ষায়ও কম-বেশি মুখোমুখি হতে হয়। তিনি বলেন, আমি স্কুল জীবনে ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত হই এবং বহু সাফল্যের দেখা পাই। সেজন্যে জেলা পর্যায়ে কালচারাল অফিসার হতে চেয়েছিলাম, কিন্তু সফল হইনি। তখন মনে হয়েছে, কী হতে চাই, আর কী হয়েছি!

ফাতেমাতুজ-জোহরা চাঁদপুর সদর উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের বিষ্ণুপুর গ্রামের বাসিন্দা। তার বাবা শাহজাহান প্রধানীয়া, যিনি লালপুর বালুধুম উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক। আর মা মনিয়ারা বেগম, যিনি হাইস্কুলের সাবেক শিক্ষিকা। চার সন্তানকে লালন-পালন করার প্রয়োজনে স্বেচ্ছায় চাকুরি ছেড়ে তিনি এখন কেবলই গৃহিণী ও স্নেহময়ী মা। ফাতেমারা তিন বোন ও একভাই। ফাতেমা সবার বড়ো। তার একমাত্র ভাই পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনীয়ারিংয়ে অনার্স, দ্বিতীয় বোন চাঁদপুর সরকারি কলেজে রসায়নে মাস্টার্স এবং ছোটবোন বাবুরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ছে।

স্কুল জীবনে ফাতেমা বার্ষিক ক্রীড়ায় দৌড়, দীর্ঘ লাফ, উচ্চ লাফ, চাকতি নিক্ষেপ, গোলক নিক্ষেপ সহ অন্যান্য ইভেন্টের প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে পুরস্কৃত হয়েছেন। হ্যান্ডবলও খেলেছেন। কলেজ জীবনে খেলাধুলায় টানা চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন কয়েক বছর। প্রাইমারী ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে ডিপিএড পড়তে গিয়েও রয়েছে তা অনুরূপ কৃতিত্ব। এছাড়া নৃত্য, গান, কবিতাবৃত্তি, চিত্রাঙ্কন, বিতর্কসহ সাহিত্য-সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় তার রয়েছে অনেক সাফল্য। কলেজ জীবনে চাঁদপুর জেলায় পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার কর্তৃক আয়োজিত মাদকবিরোধী রচনা প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়ে পঞ্চাশ হাজার টাকা ও সনদ, কাস্টমস্-এর মূসক (ভ্যাট) বিভাগ কর্তৃক আয়োজিত রচনা প্রতিযোগিতায় দেশের সেরা ১০ জনের মধ্যে চতুর্থ হয়ে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত থেকে পাঁচ হাজার টাকার প্রাইজবন্ড ও সনদ এবং বঙ্গবন্ধুর ওপর ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের এমপি মুক্তাদীর কর্তৃক দেশব্যাপী আয়োজিত রচনা প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়ে নগদ ১৫ হাজার টাকা ও সনদ অর্জন করেন।

সংস্কৃতি চর্চায় ফাতেমার নৃত্য অনেক পছন্দ। কিন্তু বয়স ও নানান পারিপার্শ্বিকতায় সেটা এখন সম্ভব হচ্ছে না। এখন মাঝেমধ্যে অভিনয় করেন এবং বঙ্গবন্ধু আবৃত্তি পরিষদের জেলা শাখায় আবৃত্তি চর্চা করেন। তিনি নারীকণ্ঠকে বলেন, বস্তুত খেলাধুলা, গান, কবিতা আমাকে বেশি টানে। এর মধ্যে খেলাধুলা আমাকে সবচে’ বেশি আত্মবিশ্বাসী করে। আর গানে খুঁজে পাই মানসিক প্রশান্তি।

সহকারী শিক্ষিকা হিসেবে ফাতেমার জব সেটিসফেকশন থাকলেও হতাশাও আছে। কারণ, এই পদ থেকে পদোন্নতি পাওয়া কঠিন। ডিপিএড পাস করেছেন, বিএড পড়বেন। প্রধান শিক্ষক, সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার হওয়ার সুযোগ পাওয়াটা নানান সমীকরণে কঠিনই বটে। বিসিএসে চেষ্টা করেছেন ও করছেন। হলে তো ভালো, অন্যথায় সরকারি নূতন সিদ্ধান্তে পদোন্নতির বিশেষ সুযোগ সৃষ্টি না হলে সহকারী শিক্ষক হিসেবে শেষ করতে হবে যে পুরো চাকুরি জীবন--এমনটি ভাবতে গেলেই ফাতেমা হতাশায় ভোগেন। তবে স্বগতোক্তি করেন, ভেঙ্গে পড়ো না, নিরাশ হয়ো না। আর মুখে মুখে আওড়ান কোরআনের সে বাণী--জেনে রেখো, নিশ্চয়ই আল্লাহর সাহায্য নিকটবর্তী (আলা ইন্না নাসরাল্লাহি কারিব)।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়