প্রকাশ : ২৭ জুন ২০২৫, ০১:০০
বর্ষায় নানার বাড়িতে একদিন

নানা বাড়ি কে না যেতে পছন্দ করে। নানা বাড়ি যাওয়া মানেই অন্যরকম খুশি সবার মনেই কাজ করে। গ্রীষ্ম, বর্ষা, শীত সব সময়ই নানা বাড়ির পরিবেশ সুন্দর। সবুর শহরে থাকে। ৭ম শ্রেণির ছাত্র। সবুর একদিন তার মায়ের কাছে ‘বায়না’ ধরলো যে, সে গ্রামে নানা বাড়ি যাবে। সবুরের মা বললো, এখন বর্ষাকাল বাবা, নানা বাড়ি গিয়ে মজা পাবে না। চারপাশে কাদা, হাঁটা-চলা যায় না। তারপরও জেদ ধরলো সে যাবেই। পরে নানীকে কল দিয়ে নানাকে আসতে বললো সবুরের মা। নানাও নাতির ‘বায়না’ শুনে আসলো। কারণ নানা তার নাতিকে খুবই স্নেহ করে, ভালোবাসে। যেদিন সকালে নানাকে নিয়ে রওনা দিলো সবুর, সেদিন সকাল থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পড়ছিলো। কিন্তু সবুরের আনন্দের সীমা ছিলো না। কারণ সে বৃষ্টিতে নানা বাড়ির মজা উপভোগ করবে। পথে যেতে যেতে নানার সাথে সে অনেক কথা। নদীতে বৃষ্টির ভেতর ট্রলারের শব্দ এবং বৃষ্টির ফোঁটা নদীতে আছড়ে পড়ছে। খুব কাছ থেকে দেখলো সবুর। সবুর তার প্রিয় নানাকে বললো, চলো না নানা বৃষ্টিতে মাছ ধরবো। নানা প্রথমে রাজি না হলেও নাতির জোরাজুরিতে সে রাজি হয়ে যায়। কারণ সব নানা-নানীরা তার নাতির আবদার রাখার চেষ্টা করে।
নানা বাড়ি যেতে না যেতেই নানীকে সালাম দিয়ে পাতিল ও মাছ ধরার জাল নিয়ে তৈরি সবুর। নানীও বেশ খুশি নাতির উৎসাহ দেখে। নানা-নাতি বেরিয়ে পড়লো মাছ ধরতে। একদিকে বৃষ্টি অন্যদিকে পুকুর-খালে মাছ ধরা। সবুরের কাছে সেই দৃশ্যটায় অন্যরকম অনুভূতি হলো। নানা যখনই খালে জাল ফেলে, তখনই সবুর চিৎকার দিয়ে নানাকে বলে, মাছ পেয়েছো নানা। নানা জাল টেনে ওঠানোর পর জালের ভেতর পুঁটি, চিংড়ি, কৈ, একটি শোল, তেলাপিয়া মাছ পেয়েছিলো। সেই মাছগুলো জাল থেকে ছাড়িয়ে পাতিলে রাখলো সবুর। মাছ ধরা শেষে কাদা পেরিয়ে ঘরে ওঠার আগে পুকুর থেকে নানীর পানি আনা পাত্রে পা ও ময়লা শরীর ধুয়ে ঘরে প্রবেশ করলো সবুর।
চারপাশে বৃষ্টি আর একদিকে নানীর চিতই পিঠা ভাজার ঘ্রাণ সবুরের ক্ষুধা বাড়িয়ে দিলো। নানীকে বললো, নানী মাছগুলো রান্না করো, আমরা সবাই রাতে মজা করে খাবো। এখন গরম গরম চিতই দেও।
দুপুরের খাওয়া শেষ করে নানী যখন সন্ধ্যায় মাছগুলো রান্নার জন্যে মাটির চুলায় দিলো, চারপাশে মাছ ভাজার ছড়িয়ে পরা ঘ্রাণ নাকে চলে আসলো। এদিকে ছোট্ট একটি বিড়াল তাকিয়ে রইলো মাছ ভাজার দিকে। সবুর লক্ষ্য করলো তাকে। সবুর মনে মনে বললো, তাকেও এই ভোজনে ভাগীদার করাবো। রাতে একত্রে ভাত ও মাছ দিয়ে পেট ভরে সবাইকে নিয়ে খাবার খেলো সবুর। মাছ রান্না বেশ মজা হয়েছে। রাতের খাবারের পর নানা তাকে গল্প শোনালো। গল্প শুনতে শুনতে সবুর আজকের দিনের কথা চিন্তা করে ঘুমিয়ে পড়ে। সকাল হলেই সবুর নানার হাত ধরে আবার চলে যায় তার শহরের বাড়িতে। তার যেতে ইচ্ছে করছিলো না। তারপরও যেতে হবে। একদিন নানা বাড়ি, তাও বৃষ্টির দিনে। সবুরের সারাজীবন নানা বাড়ির বৃষ্টির দিনের এই স্মৃতি সবসময় মনে থাকবে।