প্রকাশ : ১৩ জুন ২০২৫, ১১:০১
কিশোর উপন্যাস ডিজিটাল ভূত

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
কবিরাজ স্বপ্নীল ও তাসনিমের হাতে টাকাগুলো দেখে আনন্দ বোধ করে। জামশেদকে বলে : এই দুইটা পাখি দিয়ে আমরা সারাটা জীবন মাছ ধরবো আর খাবো। টাকার অভাব হবে না কি বলো জামশেদ?
জামশেদ : হ্যঁা ওস্তাদ। আপনের লগে তো সারাজীবনটাই কাটাইলাম। আমারে কিন্তু এখন থেকে একটু বেশি বেশি করে ভাগ দিতে অইবো। আমার বৌর কিন্তু এখন বায়না বাইড়া গেছে।
কবিরাজ : ওহ তুই তো নতুন বিয়া করছস? তোর বউতো বেশি বেশিই চাইবো। তয়, আমি দিমু ঠিক আছে। তুই কিন্তু তারে কন্ট্রোলে রাখবি। না হলে পরে পস্তাতে অইবো।
জামশেদ : ঠিক আছে ওস্তাদ। নতুন একটা ধান্ধা করার মতলবে আছি, বলতে পারি?
কবিরাজ : বল, বল, নির্ভয়ে বল। নতুন নতুন ধান্ধার কথা শুনলেই পরানডা হঁাসফঁাস করে।
জামশেদ : না, না, হঁাসের ব্যবসা না, তয় মুরগি ধরার ব্যবসা ওস্তাদ।
কবিরাজ : কি বলিস? মুরগি? কালা মুরগি?
জামশেদ : কালা, সাদা, শ্যামলা সব ধরনের মুরগি ধরার চিন্তা করছি।
কবিরাজ : ক্যামনে? তোর মাথায় অনেক বুদ্ধি আছে রে জামশেদ। আমার লগে থাইক্কা থাইক্কা একদম পাক্কা খেলোয়ার অইছস মনে অয়।
জামশেদ : বুদ্ধিটা যদি হোনেন, তাহলে আপনের পরান ঠাণ্ডা অইবো। মজাও পাইবেন?
কবিরাজ : কইয়া ফালা, কইয়া ফালা জলদি।
জামশেদ কবিরাজের কানে কানে সব কথা বলতে থাকে। কবিরাজ খুশিতে উলালা উলালা কামরূপ কামাখ্যা থাইক্যা আইয়া পড়ছে ... বলে বগল বাজাচ্ছে।
রাত প্রায় তিনটা বাজে।
জামশেদ মোবাইলটা হাতে নিলো। এরপর নিজের এগারোটি ডিজিটের মোবাইল নাম্বারটি শেষ সংখ্যাটা পরিবর্তন করে কল দিলো। একবার, দুইবার, তিন বারের সময় অপর প্রান্তে কল রিসিভ হলো।
ঘুমের ঘোরেই কল রিসিভ করলো ইমরানের স্ত্রী সুখী।
সুখী : হ্যালো।
জামশেদ জ্বিনের গলায় শুরু করলো : আসসালামু আলাইকুম। মা জননী। হযরত আলো শাহর মাজার থেকে জ্বিনের বাদশাহ ওমর শরীফ বলছি। আপনার বড়ই বিপদ। আপনার ছেলেপুলের বড়ই বিপদ।
সুখী : জ্বি। কী হয়েছে হুজুর?
জামশেদ : আপনার উপর বদ নজর লাগছে। আমি খবর পাইছি। তাই আপনারে সাবধান করে দিচ্ছি। আপনি আগামীকাল বকুলতলায় সন্ধ্যার পর আমার সাথে দেখা করবেন। আগরবাতি মোমবাতি নিয়া আসবেন। আপনার বদনজরের কুপ্রভাব ছুটাইয়া দেওয়ার ব্যবস্থা করছি।
সুখী : আচ্ছা হুজুর।
জামশেদ : ভুল করো না। তাহলে বড়ই বিপদ ঘনিয়ে আসবে।
সুখী : আচ্ছা হুজুর।
কল শেষ করে হাসলো জামশেদ। কবিরাজ বললো : এই তো আমার যোগ্য শিষ্য। টাকা রুজির সব ধরনের ধান্ধা শুরু করেছিস। কোনোটা আর বাকি থাকলো না।
জামশেদ : হ ওস্তাদ। কাল থেইক্যাই শুরু অইবো আসল খেলা।
পরদিন ঠিকই বকুলতলায় সুখী এসে হাজির। জামশেদের পরণে জ্বিনের পোশাক।
সে সুখীর হাত থেকে আতর মোমবাতি নিয়ে তার হাতে ৪টি তাবিজ দিয়ে ঘরের সবাইর গলায় ঝুলিয়ে দিতে বললো। তারপর বললো : আগামী শনিবার ঠিক এই সময় তোমার যত স্বর্ণগহনা ও টাকা পয়সা ব্যাংকে আছে একটা গামছায় বেঁধে নিয়া আসবা। তোমার সব টাকা পয়সা, স্বর্ণগহনা ৫গুণ হয়ে যাবে। তোমরা বদ নজর থেকে বেঁচে যাবে।
সুখী : জ্বি হুজুর। আমি আসবো।
পরদিন ঠিকই সুখী স্বামীকে না বলে, তার স্বর্ণগহনা ও তার নামে ব্যাংকে যা টাকা পয়সা ছিলো সব গামছায় বেঁধে নিয়ে আসলো। তারপর জামশেদের হাতে দিলো। জামশেদ বললো : তুমি কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে রাখো। আমি তোমার হাতে যা দিবো, তা নিয়ে পেছনে না তাকিয়ে চলে যাবে। তিনদিন পর সেটা খুলবে, দেখবে সব ৫গুণ হয়ে গেছে।
সুখী তাই করলো। কিন্তু তিনদিন পর জামশেদের দেওয়া পুটুলি খুলে বেহুঁশ হয়ে গেলো। সেখানে মাটির চাকা ভরা!
বোরহান সাহেব থানায় ওসির সামনে বিমর্ষ বদনে বসে আছেন। পাশে রুমা বেগম কান্না করছে। সুজন তাকে থামানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু সুজন যতই তাকে সান্তনা দিচ্ছে রুমা বেগম ততই কান্নার মাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছেন : ওরে আমার স্বপ্নীল তাসনিমরে, কোথায় তোরা!
ওসি ইরফান খান খুবই অস্থিরতায় ভুগছেন। শিশু দুটিকে আজ কয়েকমাস যাবত পাওয়া যাচ্ছে না। এটা তার থানার একটা খারাপ রেকর্ড। তিনি এএসআই করিম বখতকে ডাকলেন। তারপর এই ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলেন : করিম বখত, সেদিন সুনন্দা ওদেরকে ফলো করে পরে হারিয়ে ফেললো কেনো?
করিম বখত : স্যার, মেয়েটা ওদেরকে ফলো করতে করতে হঠাৎ করেই ওরা উধাও হয়ে যায়। তারপর অনেক খেঁাজাখুঁজি করতে করতে তাদেরকে আর পাওয়া গেলো না।
ওসি কিছুক্ষণ চুপ থাকলেন। তারপর প্রশ্ন করলেন : জায়গা তোমাদের চেনা আছে তো?
করিম বখত : জ্বি স্যার। একটা ঘন জঙ্গল, সেই জঙ্গলের মাঝে অনেক আম গাছ ..।
ওসি : তুমি একটা কাজ করো। ওই এলাকায় কোনো মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবহার হচ্ছে কিনা, কে কে কার সাথে কথা বলছে সেগুলো মোবাইল কোম্পানির কাছ থেকে বের করো। তারপর দেখা যাবে রাঘববোয়ালরা কি করছে? আমাকে ফঁাকি দিবে? ১৪টা থানায় কাজ করেছি, এমন বদনাম হয়নাই, এই থানায় এসে যা বদনাম হলো।
বোরহান সাহেব এবার মাথা তুললেন। তারপর বললেন : ওসি সাহেব। আসলে আপনাকে আমরা বেশিই বিরক্ত করে ফেলেছি। দুঃখিত।
বাধা দিলেন ওসি : না, না। এটা কি বলছেন ভাই। দুটি বাচ্চা আজ এতোদিন হয়ে গেলো, আমরা তাদেরকে খুঁজে বের করতে পারিনি, এটা আমাদেরই ব্যর্থতা। মিষ্টি এনেছেন?
রুমা বেগম এবার কান্না ভুলে হো হো করে হেসে উঠলেন। তারপর সুজনকে বললেন, সুজন ভাই কই মিষ্টির প্যাকেটগুলো ওসি সাহেবকে দাও তো।
সুজন কক্ষের বাইরে থেকে ৫ কেজি ওজনের ৫টি মিষ্টির প্যাকেট নিয়ে আসলো। তারপর ওসি সাহেবের সামনে রাখলো। ওসি সেগুলো দেখেই মুখটা কালো করে বললেন : আপনারা মনে হয় আমারে ডায়াবেটিস বানাইয়াই ছাড়বেন। এতো মিষ্টি আনতে কে বললো? শেষমেশ তো ঝা..
বোরহান : ঝাণ্ডুদা, ঝাণ্ডুদা .. সৈয়দ মুজতবা আলী। তাই না?
এবার ওসি সাহেবও হেঁসে ফেললেন। তারপর বললেন : শোনের এই ঝাণ্ডুদার কথা মনে পড়লেই আমার সব রাগ চলে যায়, তারপর কোনো জানি হাসি পায়, হাসি পায়, হাসি পায়..।
এ সময়ই আবার করিম বখত কামরায় এলো। করিম বখত বললো : স্যার, পাওয়া গেছে। ওই এলাকায় একটি মোবাইল নেটওয়ার্কের কিছু কথা আমরা পেয়েছি। মারাত্মক অবস্থা।
ওসি : দেখি দেখি শোনাও তো..।
করিম বখত তার স্মার্ট মোবাইলে কোম্পানির কাছ থেকে পাওয়া রেকর্ডগুলো শোনালেন। জামশেদ কীভাবে সুখী বেগম সহ প্রায় ডজনখানেক মহিলার সাথে কথা বলছে, তাদেরকে জ্বিনের ভয় দেখাচ্ছে এরপর বকুলতলা, ফুলতলা সহ বিভিন্ন জায়গায় আসতে বলছে রেকর্ডে তা বেজেই চলছে।
ওসি : ওমা, এ দেখি কেঁচে খুড়তে সাপ।
রুমা বেগম অস্থির হয়ে বললো : কোথায় সাপ, কোথায় সাপ!
ওসি : আরে এই সাপ সেই সাপ না, এটা হচ্ছে জ্বিন কবিরাজদের সাপ। ওগোরে ধরা এখন আমার বঁায় হাতের খেইল মাত্র। একটু অপেক্ষা করেন, দেখেন সবক’টি রুই-কাতলা ধরার ব্যবস্থা করতেছি। এরপর আর আমার প্রমোশন ঠেকায় কে? (চলবে)