প্রকাশ : ০৭ অক্টোবর ২০২৫, ১৩:৫১
৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতাল :
দু বছর ধরে নয় তলা ভবনের কাজ ফেলে রেখেই পলাতক ঠিকাদার!

প্রায় ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালের ৯ তলা ভবনের ৯০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে প্রায় দু বছর আগে। নির্মাণাধীন ভবনটির কাজ ২০২০ সালে শেষ করার কথা থাকলেও ঠিকাদার বারবার কাজের মেয়াদ ও নির্মাণ খরচ বাড়িয়েছে। ভবনটির কাজ পুরোপুরি শেষ না হওয়ায় চরম দুর্ভোগে রয়েছে হাসপাতালের শয্যা সংকট।
উল্লখ্য, জেলাবাসীকে চিকিৎসাসেবা প্রদানের লক্ষ্যে ২০১৭ সাল ১৪ মার্চ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১০০ শয্যার হাসপাতালকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করার ঘোষণা করেছিলেন।
লক্ষ্মীপুরের গণপূর্ত বিভাগের তথ্যমতে, ২০১৮ সালের জুন মাসে সদর হাসপাতালকে ১০০ থেকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করার জন্যে ৯ তলা ভবনটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। প্রথমে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৫ কোটি ৩৬ লাখ ৯ হাজার ৬৪ টাকা, কাজের মেয়াদ ছিলো ১৮ মাস। সে হিসেবে কাজটি ২০২০ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা ছিলো। তবে বারবার কাজের মেয়াদ ও খরচ বাড়ানো হয়। সর্বশেষ নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ৩৯ কোটি ৭৯ লাখ ৪৮ হাজার ৪৭৭ টাকা।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রুপালি জি এম সন্স কনসোর্টিয়াম ৯ তলা ভবনের নির্মাণকাজের দায়িত্ব পায় বলে গণপূর্ত বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছে। তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই প্রতিষ্ঠানের ঠিকাদার ইস্কান্দার মির্জা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ভাগ্নে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট থেকে ঠিকাদার আত্মগোপনে চলে যাওয়ায় ভবনের শেষ সময়ের কাজ ঝুলে গেছে।
হাসপাতাল ভবনের রং, সিঁড়ির রেলিং, দরজার পাল্লা, পানির লাইনের কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় সময়মতো বুঝে নেওয়া সম্ভব হয়নি বলে লক্ষ্মীপুর গণপূর্তের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী বেল্লাল হোসেন জানান। তিনি বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে একাধিকবার চিঠি দেওয়া হয়। যাতে প্রতিষ্ঠানটিকে কাজ দ্রুত শেষ করার জন্যে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানার জন্যে ঠিকাদার ইস্কান্দার মির্জার ব্যক্তিগত মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে তিনি কোথায় আছেন, এই তথ্যও দিতে পারছেন না কেউ।
ভবনটির অবশিষ্ট কাজ দ্রুত শেষ করার জন্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে গণপূর্ত বিভাগের চট্টগ্রাম কার্যালয়ে চিঠি দিয়েছেন লক্ষ্মীপুর গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) নাছিম আহমেদ।
সোমবার (৬ অক্টোবর ২০২৫) এ বিষয়ে লক্ষ্মীপুরের সিভিল সার্জন মোহাম্মদ আবু হাসান শাহীন এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘১৫ শতাংশ কাজ বাকি রয়েছে। পুরাতন ভবনে রুগীরা সীট না পেয়ে মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ভবনটি রোগীদের কোনো উপকারে আসছে না। গণপূর্ত বিভাগকে তাগাদা দিলেও লাভ হচ্ছে না। দ্রুত সময়ের মধ্যে বাকি কাজ শেষ করে হস্তান্তর করার চেষ্টা চলছে। ভবনটি স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে হস্তান্তর করলেই কার্যক্রম শুরু করবো।’
সোমবার (৬ অক্টোবর ২০২৫) লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালের ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, পর্যাপ্ত শয্যা না থাকায় বারান্দার মেঝেতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে রোগীদের। ষাটোর্ধ্ব আজিজ মজুমদার ৪দিন ধরে পায়ের ব্যথায় ভুগছেন। তাকে সদর হাসপাতালে নিয়ে আসেন স্ত্রী মাজেদা বেগম। কিন্তু শয্যা না থাকায় মেঝেতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। মাঝেদা বেগম বলেন, শয্যাসংকটে রোগীরা মারাত্মক ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। প্রতিদিন শতাধিক রোগীকে মেঝেতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
অপরদিকে, হাসপাতালের নতুন ভবনের কাজ শেষ করে শয্যাসংকট দূর করার দাবিতে গত ২০ মার্চ হাসপাতালের সামনে নতুন ভবনের কার্যক্রম চালুর দাবিতে মানববন্ধন করা হয়। ঘণ্টাব্যাপী এ কর্মসূচিতে এলাকাবাসীসহ বিভিন্ন স্তরের লোকজন অংশ গ্রহণ করেছেন।
মূলত অবকাঠামোগত সমস্যার কারণে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়ে সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) অরূপ পাল বলেন, প্রতিদিন গড়ে ছয় শতাধিক রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। প্রতিদিনই রোগীর চাপ বাড়ছে। নতুন ভবনটি বুঝে পেলে কার্যক্রম চালু করা হবে। তখন রোগীদের ভোগান্তি অনেকটা কমবে বলে আশাবাদী তিনি।