প্রকাশ : ২০ মে ২০২৫, ২১:৩৫
পথে প্রান্তরে : পর্ব ৪
সমাজ সংস্কারক মিজানুর রহমানের 'এক মোরগের সংসার'

শাহরাস্তি উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী মো. মিজানুর রহমান। উপজেলার চিতোষী পশ্চিম ইউনিয়নের খেড়িহর গ্রামে জন্মগ্রহণ করলেও চাকুরি জীবনের বেশিরভাগ সময় কাটান দেশের বিভিন্ন উপজেলায়। চাকরি জীবনের শেষের দিকে তিনি বদলি হয়ে শাহরাস্তি উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয়ে যোগদান করেন। একজন স্বল্প আয়ের কর্মচারী হয়েও স্বপ্ন দেখেন তাঁর এলাকার নানা সমস্যা নিয়ে। নিজ ইউনিয়নে কোনো গরিব লোক থাকবে না সেই লক্ষ্যে কাজ করছেন মিজানুর রহমান। তিনি জানান, আমার বেতনের টাকা থেকে মাসে দুহাজার টাকা করে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে কাজ করছি। ইতোমধ্যেই তিনি ১০ জন অসহায় মানুষের মাঝে পানের শোকেস ও নগদ অর্থ বিতরণ করেছেন।
সোনারগাঁও গ্রামের মিন্টু মিয়া মিজানুর রহমানের উপহার পেয়ে নরিংপুর বাজারে দোকান সাজিয়ে বসেছেন। মিন্টু মিয়া জানান, তিনি একজন কুষ্ঠ রোগী। কিছুদিন পূর্বে অপারেশন করে তার পায়ের তিনটি আঙ্গুল কেটে ফেলা হয়েছে। মিজানুর রহমানের উপহার পেয়ে দোকান নিয়ে বসেছেন। বর্তমানে তিনি প্রতিদিন গড়ে ৫ হাজার টাকা বিক্রি করেন। ৫ সদস্যের সংসার এই ব্যবসা করে চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, মিজান ভাইয়ের উসিলায় আমি ডাল-ভাত খেয়ে চলতে পারছি।
এভাবেই মিজানুর রহমানের উপহার নিয়ে ব্যবসা করে আসছে অন্যরা। এলাকায় সমাজ সংস্কারক হিসেবে মিজানুর রহমান পরিচিত। বর্তমানে তিনি এক মোরগের সংসার নিয়ে কাজ করছেন। সূচীপাড়া বাজারের একটি ফার্নিচার দোকানে তৈরি হচ্ছে মোরগের সংসারের বসবাসের জন্যে বাসা। মিজানুর রহমান জানান, একটি বাসায় একটি মোরগ থাকবে, সাথে থাকবে ১০টি মুরগি। এতে ছোট্ট একটি পরিবারের চাহিদা পূরণ হবে। এলাকার গরিব অসহায় মানুষের মাঝে বাসাগুলো বিতরণ করা হবে।
স্বল্প বেতনের একজন কর্মচারীর এ মহতী উদ্যোগ এলাকায় প্রশংসিত হচ্ছে। মিজানুর রহমান জানান, আমি আমার সাধ্যমত চেষ্টা করছি। আমার বেতন থেকে টাকা বাঁচিয়ে অল্প করে হলেও মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারছি। আমি বৃহৎ পরিসরে কিছু করতে পারবো না, তবে আমাকে দেখে অন্যরাও এগিয়ে আসুক, সেটাই চাই। তিনি বলেন, সবাই যদি নিজ নিজ এলাকায় কাজ করে, তাহলে সমাজে অসহায়, অবহেলিত মানুষ থাকার কথা নয়। এলাকার মানুষদের নিয়ে আমার আরও স্বপ্ন রয়েছে, তবে সেটা পরে তুলে ধরবো।
একজন মিজানুর রহমানের কাছ থেকে অন্যদের অনেক কিছু শেখার আছে। তিনি এর বিনিময়ে কিছু চান না । শুধু মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারলেই তিনি সকল সুখ খুঁজে পান। কেউ কেউ নেশায় আসক্ত হয়ে ধ্বংসের পথে চলে যায়, আবার কেউ মিজানুর রহমানের মতো নেশায় আসক্ত হয়ে হাসি মুখে সবার হৃদয় জয় করেন। সামর্থ্যবানদের উচিত, মিজানুর রহমানের মতো স্বল্প পরিসরে হলেও মানুষের পাশে দাঁড়ানো।