সোমবার, ২৭ অক্টোবর, ২০২৫
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ২৭ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:৫৫

চাঁদপুর জেলা যুবদলের ইতিহাস

অ্যাড. মোহাম্মদ ইয়াসিন আরাফাত ইকরাম
চাঁদপুর জেলা যুবদলের ইতিহাস

চাঁদপুর মহকুমা থাকাকালীন চাঁদপুরে যুবদলের আত্মপ্রকাশ ঘটে। চাঁদপুর মহকুমা যুবদলের হাতেখড়ি হয় মরহুম হাবিবুল্লা চৌধুরী, মুক্তিযোদ্ধা নিজামউদ্দিন, প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক সাখাওয়াত হোসেন, অধ্যাপক শাহজাহান ও মুজ্জামেল হোসেন খানদের মাধ্যমে। সাবেক প্রেসিডেন্ট মরহুম জিয়াউর রহমান যুবদল প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদল প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকেই চাঁদপুরের যুবনেতারা মহকুমা যুবদল প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৭৯ সালে চাঁদপুর শহরস্থ পালবাজার সংলগ্ন হাবিবুল্লা চৌধুরীর বাসভবনে যুবদল প্রতিষ্ঠিত হয়। তৎকালীন চাঁদপুর মহকুমা (বিএনপির রাজনৈতিক জেলা)-এর সভাপতি ছিলেন ক্যাপ্টেন করিমউদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন অ্যাড. শেখ মতিউর রহমান। (বর্তমানে তাঁরা মরহুম) ১৯৭৯ সালে চাঁদপুর টাউন হলে যুবদলের সম্মেলনের মাধ্যমে মহকুমা যুবদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়। সম্মেলনে সভাপতি হিসেবে হাবিবুল্লা চৌধুরী, সহ-সভাপতি হিসেবে সাখাওয়াত হোসেন ও সেক্রেটারি হিসেবে অধ্যাপক শাহজাহান নির্বাচিত হন। ওই সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রয়াত যুবমন্ত্রী আবুল কাশেম চৌধুরী ও কেন্দ্রীয় যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন আহমেদ। পরবর্তীতে এই কমিটি ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ কমিটি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে। এ সময় এ কমিটি চাঁদপুরের বিভিন্ন উপজেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করে। পরবর্তীতে ১৯৮৩ সালের মধ্য ফেব্রুয়ারিতে সামরিক সরকার হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ঘরোয়া রাজনীতির অনুমতি দিলে চাঁদপুরের একদল সাবেক ছাত্রনেতা ও যুবদল সদস্যরা চাঁদপুর সরকারি কলেজের বাস্কেটবল মাঠে বসে চাঁদপুর মহকুমা যুবদলের ১১ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেন। সেই কমিটির আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেন অ্যাড. সলিম উল্লাহ সেলিম। সদস্যরা হলেন মুনির চৌধুরী, সফিকুর রহমান ভূঁইয়া, শহিদুল ইসলাম মক্কু, মিজানুর রহমান পাটওয়ারী, দুলাল গাজী, হারুনুর রশিদ মোল্লা, মাহমুদ সফিক, হাবিবুর রহমান হাবু, মান্নান মন্টু ও জসিমউদ্দিন। পরবর্তীতে এই কমিটিকে জেলা বিএনপির তৎকালীন সভাপতি শেখ মতিউর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক সফিউদ্দিন আহমেদের সুপারিশক্রমে কেন্দ্রীয় যুবদলের দপ্তর সম্পাদক গয়েশ্বর চন্দ্র রায় চাঁদপুর সরকারি কলেজ সংলগ্ন সাবেক আকবরী হোটেলে বসে ১৯৮৪ সালে অনুমোদন দেন। এরপর এই কমিটির মাধ্যমে প্রতিটি উপজেলায় আহ্বায়ক কমিটি করে সম্মেলনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়।

এরপর ১৯৮৭ সালে চাঁদপুর টাউন হলে সম্মেলনের মাধ্যমে জেলা যুবদলের সভাপতি হিসেবে অ্যাড. সলিম উল্লাহ সেলিম, সিনিয়র সহ-সভাপতি হিসেবে মুনির চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সফিকুর রহমান ভূঁইয়া ও সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে শহিদুল ইসলাম মক্কুকে ঘোষণা দেয়া হয়। ওই সম্মেলনে অতিথি ছিলেন মির্জা আব্বাস ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তখনকার এই যুবদল জেলা কমিটি স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে এবং ৭ দল ও ১৪ দলের যুব ঐক্য কমিটি গঠন করে। সেই কমিটির আহ্বায়কের দায়িত্বে ছিলেন অ্যাড. সলিম উল্লাহ সেলিম।

১৯৮৭ সালে খান দেলোয়ারকে আহ্বায়ক করে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। ওই আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিবের দায়িত্ব দেয়া হয় অ্যাড. সলিম উল্লাহ সেলিমকে। পরবর্তীতে চাঁদপুর জেলা যুবদলের কার্যক্রমকে সুচারুভাবে পরিচালনা করার স্বার্থে জেলা যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে ১৯৮৯ সালে তখনকার জেলা যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মুনির চৌধুরীকে দায়িত্ব দেয়া হয়। ওই কমিটির নেতৃত্বে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর সাবেক রাষ্ট্রপতি মরহুম হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ সরকার পতন আন্দোলনে অংশ নেয়া হয়। এরপর ১৯৯১ সালে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে বিএনপি রাষ্ট্রক্ষমতায় আসে। ১৯৯৩ সালে যুবদলের পুনরায় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। চাঁদপুর শহিদ মিনার বালুর মাঠে সেই সম্মেলনে অতিথি ছিলেন সাবেক সংস্থাপন প্রতিমন্ত্রী মরহুম নুরুল হুদা, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। ওই সময়ে গণতান্ত্রিক উপায়ে ভোটাভুটির মাধ্যমে সভাপতি পদে মুনির চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক পদে সফিকুর রহমান ভূঁইয়া ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে হুমায়ন কবির প্রধান নির্বাচিত হন। ওই কমিটির মাধ্যমে তখন জেলার বিভিন্ন উপজেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন দেয়া হয়। এই কমিটির মেয়াদ থাকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত। পরবর্তীতে সফিকুর রহমান ভূঁইয়াকে আহ্বায়ক করে ৭১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি অনুমোদন দেয়া হয়। ওই কমিটিও প্রত্যেক উপজেলায় কমিটি অনুমোদন দেয়। পরবর্তীতে ওই আহ্বায়ক কমিটি চাঁদপুর হাসান আলী হাইস্কুল মাঠে সম্মেলন আয়োজন করে, যাতে সফিকুর রহমান ভূঁইয়াকে সভাপতি ও কাজী গোলাম মোস্তফাকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। এই কমিটি ২০০৬ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করে। পরবর্তীতে সফিকুর রহমান ভূঁইয়া আবারো আহ্বায়ক নির্বাচিত হন। এরপর ২০১১ সালের ২৩ জানুয়ারি শাহজালাল মিশনকে সভাপতি, আফজাল হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক ও মোফাজ্জল হোসেন চান্দুকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে কেন্দ্রীয় কমিটি জেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন দেয়। এরপর ২০১৮ সালের ১৩ জুন কেন্দ্রীয় যুবদল নেতৃবৃন্দ মোফাজ্জল হোসেন চান্দুকে সভাপতি, মানিকুর রহমান মানিককে সিনিয়র সহ-সভাপতি, অ্যাড. নুরুল আমিন খান আকাশকে সাধারণ সম্পাদক, কামাল হোসেনকে যুগ্ম সম্পাদক ও ফয়সাল আহমেদ বাহারকে সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে অর্থাৎ সুপার ফাইভবিশিষ্ট কমিটি অনুমোদন দেন। পরবর্তীতে ২০১৮ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর জেলা যুবদলের নেতৃবৃন্দ পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করেন। এরই মধ্যে জেলা যুবদলের সভাপতি রাজপথের লড়াকু সৈনিক মোফাজ্জল হোসেন চান্দু মারা যাওয়ার পর ২০১৯ সালের ১৭ জুন থেকে জেলা যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে সিনিয়র সহ-সভাপতি মানিকুর রহমান মানিক দায়িত্ব পালন করেন।

চাঁদপুর জেলা যুবদলের সভাপতি হিসেবে মানিকুর রহমান মানিক ২০২৩ সালের ১৩ এপ্রিল থেকে বর্তমানে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক হিসেবে অ্যাড. নূরুল আমিন খান আকাশ ও সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে ফয়সাল আহমেদ বাহারের নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে চাঁদপুর জেলা যুবদল।

(বি. দ্র. এই তথ্যগুলো জেলা যুবদলের সাবেক নেতাদের সাথে আলাপ করে নেয়া হয়েছে। যদি এ ক্ষেত্রে সিনিয়র কোনো নেতার নাম কিংবা কোনো কিছু ভুল হয়ে থাকে তাহলে লেখকের প্রতি ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন এবং আগামীতে জেলা যুবদলের যে কোনো বিষয়ে আলোচনা করবেন বলে বিশ্বাস করছি।)

লেখক : আইন বিষয়ক সম্পাদক, চাঁদপুর জেলা যুবদল; সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি), চাঁদপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালত।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়