প্রকাশ : ২০ অক্টোবর ২০২৫, ২০:৪৭
বিশ্ববিদ্যালয় পরিক্রমা আয়োজিত কৃতী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
একটা দেশে সঠিকভাবে মানুষ হওয়াটাই বড়ো কাজ

শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের সময় যে ঐক্য ছিলো, সেই ঐক্য দেশের রাজনীতিবিদরা ‘হারিয়ে ফেলছেন’ বলে মনে করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সোমবার (২০ অক্টোবর ২০২৫) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় পরিক্রমা আয়োজিত ঢাকা বিভাগের জিপিএ-৫ প্রাপ্তদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, এতো বড়ো একটা অভ্যুত্থানের পরে এতো বড়ো একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে দেশটাকে আবার সুন্দর করে গড়ে তুলবার। কিন্তু আমরা চারদিকে দেখছি যে, আমাদের রাজনীতিবিদরা ঐক্য হারিয়ে ফেলছেন। চারদিকে দেখছি একটা অনৈক্যের সুর। এতে আমরা অনেকেই হতাশ হচ্ছি। খবর প্রেস বিজ্ঞপ্তির।
এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ছাত্র-ছাত্রীদের সংবর্ধনা দিতে মাসিক ম্যাগাজিন ‘বিশ্ববিদ্যালয় পরিক্রমা’র উদ্যোগে কাকরাইলের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে এই অনুষ্ঠান হয়। প্রধান অতিথি হিসেবে শিক্ষার্থীদের হাতে ক্রেস্ট ও সনদ তুলে দেন বিএনপি মহাসচিব।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা থেকে পড়ে শুনিয়ে শিক্ষার্থীদের তিনি বলেন, ভবিষ্যৎ তোমাকে ডাকছে। আজকে তোমরা যারা যৌবনে পা দিচ্ছ, নতুন পৃথিবীতে পা দিচ্ছ, সেই পৃথিবী তোমাদের ডাকছে। যে কথাটা ডক্টর সুবর খান বলেছেন যে, নিজেকে তৈরি করতে হবে পৃথিবীর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে।
বিএনপির প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক রাশেদা বেগম হীরার সভাপতিত্বে বিশ্ববিদ্যালয় পরিক্রমার ব্যবস্থাপনা সম্পাদক মোবারক হোসেনের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির চেয়ারম্যান ড. মো. সবুর খান, বিএনপির সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন, বিশ্ববিদ্যালয় পরিক্রমার প্রধান সম্পাদক হারুন অর রশিদ, শিক্ষাবিদ এমএ সাজ্জাদ, জমিরুল আকতার, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের আহ্বায়ক কবীর হোসেন, সদস্য সচিব কাজী শওকত হোসেন, ডক্টরস্ অ্যাসোসিয়েশনের ঢাকা মহানগর উত্তরের অধ্যাপক সরকার মাহবুব আহমেদ শামীম, মুন্সিগঞ্জ বিএনপির সদস্য মোশাররফ হোসেনসহ কৃতী শিক্ষার্থীরা।
অনুষ্ঠানে ড. মো. সবুর খান তরুণদের ঐক্য ধরে রাখার আহ্বান জানিয়ে বলেন, দেশে আজ ঐক্যের বড়ো অভাব। এই ঐক্যের কারণে আমাদের সমাজ এগুতে পারছে না। পরস্পরের সাথে বন্ধুত্ব করার আহ্বান জানান তিনি। তিনি শিক্ষার্থীদের বিদেশমুখিতা পরিহার করে বিসিএস হওয়ার প্রবণতা বাদ দিয়ে উদ্যোক্তা হওয়ার আহ্বান জানান। কারণ একজন উদ্যোক্তা শুধু নিজেই স্বয়ংসম্পূর্ণ হন না, পাশপাশি তিনি অনেক লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করেন। তিনি তাঁর প্রতিষ্ঠানের উদাহরণ দিতে গিয়ে বলেন, তাঁর প্রতিষ্ঠানে ৫০০-এর ওপর কর্মকর্তা রয়েছেন, যারা তার স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু-বান্ধব।
তিনি শিক্ষার্থীদের সোসাল মিডিয়া ব্যবহারে কৌশলী হওয়ার পরামর্শ দেন। বিশ্বজগৎকে আপন হাতের মুঠোয় আনতে ও বহির্বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে কমিউনিকেশন দক্ষতা বৃদ্ধির সাথে সৃজনশীলতার মাধ্যমে ক্যারিয়ার ফোকাস এবং জীবনের লক্ষ্য এখন থেকেই নির্ধারণে সচেষ্ট হওয়ার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল আরো বলেন, পৃথিবী প্রতিযোগিতার পৃথিবী হয়ে গেছে। তুমি যদি টিকতে না পারো, তুমি নিক্ষিপ্ত হয়ে যাবে। সেই জায়গায় তোমাকে পৌঁছাতে হবে। তারপরে তোমাকে তৈরি হতে হবে। শিক্ষার বর্তমান অবস্থার জন্যে রাজনীতিবিদ-আমলারাই দায়ী।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য যে, আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা সেইরকম তো নেই, বরং অত্যন্ত নিম্নমানের। এর জন্যে দায়ী রাজনীতিবিদরাই, এর জন্যে দায়ী আমরাই, এর জন্যে দায়ী আমাদের আমলাতন্ত্র। এখানে শিক্ষার ওপরে খুব কম গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আমরা বিএ পাস করি, এমএ পাস করি। চাঁদপুরের গ্রাম থেকে অথবা আমার ঠাকুরগাঁওয়ের গ্রাম থেকে, সে ঘুরে বেড়ায় কোনো কাজ পায় না। কারণ বিএ পাস এমএ পাসকে চাকরি দিতে পারেন না। কিন্তু সে যদি বিএসসি পাস করতো, অথবা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে একটা ডিপ্লোমা নিতে পারতো, ইলেকট্রিসিটির ওপরে অথবা সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ওপরে অথবা অন্যান্য বিষয়ের ওপরে, তাহলে কিন্তু তার চাকরি কেউ আটকাতে পারতো না। এই যে নীতির ব্যাপারটা, এখানেই রাজনীতিবিদদের ব্যর্থতা।
এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের আন্দোলনের প্রসঙ্গ ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের স্যারেরা আন্দোলন করছেন, রাস্তায় আছেন শিক্ষকদের বেতনের জন্যে। এটা তো অনেক ভালো হতে পারতো যদি আমরা পুরোপুরি এটাকে পরিবর্তন করে শুধুমাত্র অতি মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্যে উচ্চশিক্ষা এবং আমাদের বেশিরভাগ সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্যে ভোকেশনাল অ্যান্ড টেকনিক্যাল ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করতে পারতাম। আজকে কারিগরি শিক্ষার ব্যবস্থা নেই, তার পর্যাপ্ত ইনস্টিটিউট নেই। ভোকেশনাল সেন্টারগুলো তেমন নেই। আমরা এগুলো তৈরি করি না। আমরা বিএ পাস, এমএ পাস তৈরি করছি। তাহলে এই তরুণরা বিকশিত হবে কীভাবে?
মানুষের কর্মসংস্থানের জন্যে কারিগরি শিক্ষার ওপরে জোর দিতে হবে বলে মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব। ‘জেন জিদের এগিয়ে দিতে হবে’ উল্লেখ করে
মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের এখন একটা ক্রান্তিকাল চলছে, ট্রানজিশনাল পিরিয়ড, যাতে খুব অস্থিরতা আছে।
তিনি বলেন, রাশেদা বেগম হীরা যখন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সাথে হিজবুল বাহারে সমুদ্র ভ্রমণে গিয়েছিলেন এবং তাকে সমুদ্র সম্পর্কে জানানো হয়েছে সেখানে, তখনকার সময় আর এখনকার সময় তো এক নয়। এখন ওরা ওই যে ছোট্ট সেট (মোবাইল সেট), সেই সেটের মধ্যে গোটা পৃথিবীকে পেয়ে যায়। অনেকেই ওরা আমাদের চেয়ে অনেক বেশি জানে, এটা আমাদের বুঝতে হবে। এই জানাটা, এটাকে ব্যবহার করাটা, এটাই কিন্তু সুনির্দিষ্ট মঙ্গল খাতে যেতে হবে, মঙ্গলের জন্যে, ধ্বংসের জন্যে নয়। আজকে গোটা পৃথিবীতে কিন্তু অস্থিরতা। সব মিলিয়ে আমরা যদি মানব কল্যাণে কাজ করি, সব মিলিয়ে আমরা যদি সুন্দর পৃথিবী তৈরির জন্যে কাজ করি, সবাই মিলে, তাহলেই আমরা সেটাকে সুন্দর করে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবো।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে ফখরুল বলেন, তোমাদের জন্যে আমাদের দোয়া, তোমাদের জন্যে আমাদের সার্বক্ষণিক প্রার্থনা আল্লাহতালার কাছে। আল্লাহতায়ালা তোমাদেরকে যেন সঠিকভাবে মানুষ হওয়ার মত তৈরি করেন। একটা দেশে এই মানুষ হওয়াটাই সবচেয়ে বড়ো কাজ।