প্রকাশ : ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:১১
প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ, বাস্তবতা ভিন্নতর

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী বলেছেন, আগামীতে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষার বিকল্প নেই। শিক্ষক প্রশিক্ষণ, আধুনিক প্রযুক্তি সুবিধা আর হাতে-কলমে শেখার পরিবেশ তৈরি করতে পারলেই আমরা দক্ষ প্রজন্ম গড়ে তুলতে পারবো। তিনি আরো বলেন, বিদ্যালয় পর্যায়ে প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা গেলে শিক্ষার্থীরা শিখবে আরও দ্রুত ও সৃজনশীলভাবে। আমাদের লক্ষ্য এমন একটি শিক্ষা কাঠামো গড়ে তোলা, যা আগামী দিনের দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে সহায়তা করবে। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ সামছুল হক বলেন, প্রযুক্তিতে দক্ষ তরুণ সমাজই দেশের উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করবে। এজন্যে আগামী প্রজন্মকে দক্ষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মো. নাজমুল ইসলাম সরকার বলেন , শিক্ষার্থীদের জন্যে সাইবার নিরাপত্তা, ডিজিটাল দক্ষতা ও অনলাইন শিক্ষা ব্যবহারের বাস্তব নির্দেশনা তুলে ধরতে হবে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী- অভিভাবকগণ প্রযুক্তির সুবিধা, স্মার্ট ক্লাসরুম, ডিজিটাল কনটেন্ট এবং শিক্ষা ব্যবস্থার আধুনিকায়ন বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন ও প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। উপস্থিত সবাই ভবিষ্যতের প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থার রূপরেখা সম্পর্কে আরও স্পষ্ট ধারণা লাভ করেন। শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর ২০২৫) সকালে শাহরাস্তি সরকারি বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ও বিকেলে উঘারিয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতাকালে জনাব শীষ হায়দার চৌধুরী সহ অন্যান্য বক্তা উপরোল্লিখিত কথাগুলো বলেন। তাঁদের এসব কথার বিপরীতে বাস্তবতা ভিন্নতরই পাওয়া যায়। প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষাটা আসলে কী সে সম্পর্কে জানা দরকার। এটি হচ্ছে এমন একটি পদ্ধতি, যেখানে ডিজিটাল ডিভাইস, অনলাইন প্ল্যাটফর্ম এবং বিভিন্ন সফটওয়্যার ও অ্যাপ ব্যবহার করে শিক্ষাদান ও শেখার প্রক্রিয়াকে কার্যকর, আকর্ষণীয় ও সহজ করা হয়, যা শিক্ষার্থীদের একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রস্তুত করে এবং শেখার অভিজ্ঞতাকে উন্নত করে তোলে। কিন্তু বিশেষায়িত কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ব্যতীত বাকি সব সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নগণ্য সংখ্যক ব্যতিক্রম ছাড়া প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষার অতি প্রয়োজনীয় উপকরণ ও জনবল সঙ্কট অতি সাধারণ চিত্র। এ চিত্র পাল্টাতেই তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব জনাব শীষ হায়দার চৌধুরী শাহরাস্তির মতো প্রত্যন্ত এলাকায় ছুটে এসেছেন কথা বলতে। এটা খুবই ইতিবাচক। এভাবে নিশ্চয়ই তিনি আরো অনেক জায়গায় যাবেন, কিংবা তাঁর অধঃস্তনদের পাঠাবেন। সাথে সাথে প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষা কার্যক্রম কার্যকরভাবে বাস্তবায়নে নানা পদক্ষেপ নেবেন। এ ক্ষেত্রে মনিটরিং ও ফলোআপের বিষয়েও সিরিয়াস হবেন। আমরা নিকট অতীতে প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষার নামে যা দেখেছি, সেটা কিন্তু সুখকর নয়। নাম ফুটানো, বাহবা কামানো ও চাটুকারিতার চিত্রই বারবার দেখেছি, সত্যিকারের প্রয়াস দেখতে পাইনি। দুঃখজনক বিষয় হলো, নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষাটা পুরোপুরি খুব কম শিক্ষার্থীই পায়, যেজন্যে ব্যয়বহুলভাবে প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের দ্বারস্থ হতেই হয়। সেজন্যে প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষা সামগ্রিকভাবে করায়ত্ত করাটা উচ্চ মধ্যবিত্ত ও ধনী পরিবারের সদস্য ছাড়া অন্যদের কাছে সোনার হরিণের মতোই, যারা প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারে না। এই কঠিন বাস্তবতা মাথায় রেখে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়কে নানা পদক্ষেপ নিতে হবে এবং সেটার সুষ্ঠু ফলোআপ করতে হবে।




