প্রকাশ : ২৭ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:৫২
ফরিদগঞ্জে মাদকের এতো বড়ো চালান!

ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশের অভিযানে ৫২ কেজি গাঁজা উদ্ধার ও আটক ১। এটি ছিলো গতকালকের চাঁদপুর কণ্ঠে প্রকাশিত শীর্ষ সংবাদের শিরোনাম। সংবাদটিতে এমরান হোসেন লিটন লিখেছেন, শনিবার (২৫ অক্টোবর ২০২৫) ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশের অভিযানে ৫২ কেজি গাঁজা উদ্ধার হয়েছে। স্মরণকালের এ সফল অভিযানে সার্বিক দিকনির্দেশনা প্রদান করেন ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ শাহ্ আলম, পিপিএম-সেবা। শনিবার দুপুরে পুলিশ মিডিয়া চাঁদপুর-এর এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অর্থ ও প্রশাসন) মো. লুৎফর রহমান জানান, ফরিদগঞ্জ থানায় কর্মরত এসআই মোহাম্মদ আরিফুর রহমান সরকার ও এসআই শেখ আশরাফুল আলম সঙ্গীয় ফোর্সের সহায়তায় ফরিদগঞ্জ উপজেলার সকদিরামপুর গ্রামের মো. খলিলুর রহমান (৬০) (পিতা-সিরাজুল ইসলাম, সাং-সকদিরামপুর, থানা-ফরিদগঞ্জ জেলা-চাঁদপুর)-এর বসত বাড়ির গোসলখানা থেকে এ বিপুল পরিমাণ গাঁজা উদ্ধার করে। গোপন সংবাদে জানা যায় যে, শনিবার ভোর ৬টায় একটি অজ্ঞাতনামা সাদা প্রাইভেট কারযোগে খলিলুর রহমান ও তার সহযোগী আল-আমীন (৩০) (পিতা-খলিলুর রহমান, সাং-সকদীরামপুর) ও মো. রুবেল (৩০) (পিতা-শাহজাহান প্রকাশ সাজু গাজী, সাং সকদীরামপুর, ১নং ইউনয়িন ২নং ওর্য়াড, থানা- ফরদিগঞ্জ, জেলা-চাঁদপুর)সহ অজ্ঞাতনামা ২/৩ জনের সহায়তায় তার বসত ঘরের গোসলখানায় বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য (গাঁজা) মজুদ রেখেছে। পুলিশ এ সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে অভিযান পরিচালনা করে মো. খলিলুর রহমান(৬০)কে গ্রেফতার করত তার বসতঘরের গোসলখানা হতে ৫২ (বায়ান্ন) কেজি গাঁজা উদ্ধার করে। ঘটনাস্থল হতে আরিফ (খলিলের পুত্র) ও রুবেল নামে দুজন আসামি পালিয়ে যায়। এ বিষয়ে মাদকদ্রব্য আইনে নিয়মিত মামলা রুজু হয়েছে।
ফরিদগঞ্জে ষাট বছর বয়সী শ্মশ্রুমণ্ডিত মো. খলিলুর রহমান ছিঁচকে কোনো মাদক ব্যবসায়ী যে নয় সেটা তার মাদকের বিশাল চালান আটকের মধ্য দিয়েই প্রমাণিত হলো। সে বস্তুত মাদকের অনেক বড়ো আড়তদার। তার এ আড়তদারি ব্যবসা চাঁদপুরের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সোর্সের জানা না থাকলেও সাধারণ মানুষের ঠিকই জানা ছিলো। নিজের ঔরসজাত পুত্র সন্তানকে স্বীকৃত কোনো পেশায় না জড়িয়ে নিজের লাভজনক মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে খলিলুর রহমান নীরবে নিভৃতে অনেক বড়ো মাদক ব্যবসায়ী হয়ে গেলো। এটা পুলিশ কিংবা অন্য কোনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গোয়েন্দা নজরদারিতে না থাকাটা বিস্ময়করই ঠেকছে। তারপরও সাধারণ মানুষের দেয়া গোপন সংবাদে ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশের মাদকের এতো বড়ো চালান আটককে বিরাট সফলতাই বলতে হবে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে খলিল থেকে নিশ্চয়ই পুলিশ জানতে পারবে, ফরিদগঞ্জ সহ সন্নিহিত এলাকায় বড়ো মাদক ব্যবসায়ী কারা কারা আছে এবং তার ছোট-বড় ক্রেতা কারা কারা।
ফরিদগঞ্জে মাদকের বড়ো চালান আটকের ঘটনা এটাই প্রথম নয়। আরো বহুবার আটক হয়েছে, তবে শনিবারের চেয়ে কম। মাদকের বিপুল ক্রেতা ও সেবনকারী ফরিদগঞ্জ ও সন্নিহিত এলাকায় আছে বলেই খলিলুর রহমান গাঁজার মজুদ অনেক বেশি বাড়াবার অপচেষ্টা চালাতে গিয়েছে এবং সে কারণে ধরা পড়েছে, যাতে সন্দেহের অবকাশ নেই। খলিলুর রহমানের এই ধরা পড়াটা ফরিদগঞ্জের ভয়াবহ মাদক পরিস্থিতিকে ইঙ্গিত করে, যেটা উদ্বেগজনক। ফরিদগঞ্জে অপরাধ প্রবণতাও চাঁদপুর জেলার অন্যান্য উপজেলার চেয়ে বেশি। প্রতিবছর শীত মৌসুমে ডাকাতির অধিক ঘটনায় ফরিদগঞ্জ গণমাধ্যমের উল্লেখযোগ্য উপজীব্যে পরিণত হয়।
জনসংখ্যার দিক দিয়ে চাঁদপুর সদর উপজেলার পরেই ফরিদগঞ্জের অবস্থান। ফরিদগঞ্জের জনসংখ্যা প্রায় চার লাখ। এ উপজেলার চেয়ে কম জনসংখ্যা অধ্যুষিত মতলব উত্তর ও কচুয়া এবং আয়তনের দিক দিয়ে ছোট শাহরাস্তি ও হাইমচরে থানার বাইরে পুলিশ ফাঁড়ি রয়েছে। অথচ ফরিদগঞ্জে নেই। কেন নেই সেটা প্রশ্নবোধক। এ বিষয়ে চাঁদপুর কণ্ঠের সম্পাদকীয় নিবন্ধে বারবার লিখা হয়েছে। কিন্তু স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিবিদ, পুলিশ হেড কোয়ার্টার ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কেন নিশ্চুপ সেটা বোধগম্য নয়। ফরিদগঞ্জের ভৌগোলিক অবস্থানহেতু এখানে থানার বাইরে পুলিশ ফাঁড়ি নয়, একাধিক থানা থাকার যৌক্তিকতা ও প্রয়োজনীয়তা আছে বলে আমরা মনে করি।




