রবিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫  |   ৩২ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮:৪১

অ্যাঞ্জেলা রেইনারকে সরে দাঁড়াতেই হলো

এস ইসলাম, লন্ডন থেকে
অ্যাঞ্জেলা রেইনারকে সরে দাঁড়াতেই হলো

গত কিছুদিন ধরে লন্ডনের রাজনৈতিক অঙ্গন ও গণমাধ্যমে তুমুল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন লেবার পার্টির ডেপুটি লিডার ও সরকারের উপ-প্রধানমন্ত্রী অ্যাঞ্জেলা রেইনার। তাঁকে ঘিরে তৈরি হওয়া বিতর্কে প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমারের ওপরও বাড়ছিলো পদত্যাগের চাপ। নানা প্রচেষ্টা সত্ত্বেও নিজেকে নির্দোষ প্রমাণে ব্যর্থ হন রেইনার। অবশেষে তাঁকে বিদায় নিতে হয়Ñমন্ত্রিত্ব, উপ-প্রধানমন্ত্রিত্ব এবং পার্টির ডেপুটি লিডারের পদ থেকে।

লেবার পার্টির উজ্জ্বলতম তারকাদের একজন, যিনি শ্রমজীবী মানুষের কণ্ঠস্বর হয়ে পার্টিকে নতুন শক্তি দিয়েছেন, সেই রেইনারের বিদায় ছিলো দলের জন্যে এক কঠিন আঘাত। কিন্তু কেন এমন পরিণতি? সূত্রপাত হয়েছিল একটি বাড়ি কেনা নিয়ে। প্রায় আট লাখ পাউন্ড মূল্যের বাড়িটি কিনতে গিয়ে ট্যাক্স-সংক্রান্ত জটিলতায় গরমিল ঘটে। সেটিকে নিজের প্রধান আবাসন দেখিয়ে ইনহেরিটেন্স ট্যাক্সে রেয়াত নেন তিনি। কিন্তু বাস্তবে সেটিকে প্রধান আবাসন হিসেবে প্রমাণ করতে ব্যর্থ হন। পরে দাবি করেন আইনজীবীর ভুল পরামর্শের কারণেই এ সমস্যা তৈরি হয়েছে। তবে তাঁর আইনজীবী তা অস্বীকার করেন। শেষ পর্যন্ত হিসাব কষে দেখা যায়, তিনি স্ট্যাম্প ডিউটিতে প্রায় ৪০ হাজার পাউন্ড কম জমা দিয়েছেন।

বিষয়টি আর ছোট করে দেখা গেল না। সংসদের নৈতিকতা রক্ষাকারী কর্মকর্তারা স্পষ্ট জানিয়ে দেন মন্ত্রী হিসেবে তিনি নিয়ম ভঙ্গ করেছেন। শুরু হয় প্রবল চাপ। সংবাদপত্রের প্রথম পাতায় প্রতিদিন তাঁর নাম, টানা নজরদারি যা প্রভাব ফেলছিলো তাঁর পরিবার, বিশেষত সন্তানদের ওপর, যাদের তিনি একাই বড়ো করছেন।

অবশেষে তিনি চিঠি লিখলেন “আমি সর্বোচ্চ মানদণ্ডে পৌঁছাতে পারিনি। এর দায়ভার আমারই।”

এই চিঠিই ছিলো তাঁর পদত্যাগপত্র। একই দিনে শেষ হলো তাঁর ডেপুটি প্রাইম মিনিস্টার হিসেবে দায়িত্বের অধ্যায়।

তবে রাজনীতির মঞ্চ শূন্য থাকে না। মুহূর্তেই নতুন দায়িত্ব বণ্টন হলো ডেভিড ল্যামি হলেন নতুন উপ-প্রধানমন্ত্রী, ইয়েভেট কুপার গেলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে, আর শাবানা মাহমুদ নিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। দাবার বোর্ডের ঘুঁটির মতোই পাল্টে গেল অবস্থান।

কিন্তু অ্যাঞ্জেলা রেইনারের গল্প এখানেই শেষ নয়। শ্রমজীবী পরিবার থেকে উঠে আসা এই নারী বরাবরই পরিচিত ছিলেন লড়াকু চরিত্রের জন্যে। সমর্থকেরা বিশ্বাস করে তিনি হাল ছাড়েননি, কেবল সাময়িক বিরতি নিয়েছেন।

এখন লেবার পার্টির ভেতরে নতুন প্রশ্ন কে হবেন ডেপুটি লিডার, কীভাবে সামলাবে দল এই সংকট?

আর রেইনার?

তিনি আপাতত পর্দার আড়ালে, কিন্তু ব্রিটিশ রাজনীতির ইতিহাসে তাঁর নাম এখনও উচ্চারিত হচ্ছে এক নারী, যিনি নিজের ভুল স্বীকার করে সরে দাঁড়ালেন, অথচ রেখে গেলেন দৃঢ় ছাপ।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়