বুধবার, ১৪ মে, ২০২৫  |   ৩৪ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে নেতাকর্মীদের ঢল

প্রকাশ : ১৪ মে ২০২৫, ০৮:৩৬

শ্রমই পারে সফলতা বয়ে আনতে

জমির হোসেন
শ্রমই পারে সফলতা বয়ে আনতে

একমাত্র শ্রমই পারে মানুষের জীবনে সফলতা বয়ে আনতে। শ্রমই হচ্ছে উপার্জনের প্রথম পদক্ষেপ। যত বেশি শ্রম তত বেশি আয়। এই প্রত্যাশা নিয়ে বিশ্বের শ্রমজীবীরা উপার্জনের তাগিদে গা ভাসিয়ে দেন ভিন্ন ভিন্ন পেশায়। এমনকি পথে প্রান্তরে। একটি বিষয় সুস্পষ্ট শ্রমের মাঝে রয়েছে বিভাজন উচু শ্রেণি ও নিচু শ্রেণির শ্রমিক। তার ওপর আছে আবার আয়ের ভেদাভেদ। এভাবেই আমৃত্যু পর্যন্ত মানুষ কাজ করে যায় জীবনের চাহিদা মেটাতে। ভাগ্য পরিবর্তন করতে দিন-রাত শ্রম দেয় শ্রমিকরা। কিন্তু কে দেয় শ্রমের সঠিক ন্যায্যতা তাদের? তবু থেমে নেই বিশ্বের প্রায় ৩.৬ বিলিয়ন শ্রমজীবী মানুষ। ২০২৫ সালের জানুয়ারি ২৯ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে আসে। তবে এর স্থায়ী সঠিক পরিসংখ্যান নেই কারণ প্রতি সেকেন্ড জন্ম এবং মৃত্যু হয়।

রিসার্চ এক্সপার্ট আইনার এইচ.ডাইভিকের একটি প্রতিবেদনে দেখা যায়, ১৯৯১-২০২৫ পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে ৩.৬ বিলিয়ন শ্রমজীবী রয়েছে। ১৯৯১ সালে ২.২৩ বিলিয়ন মানুষ ছিল। সেখানে প্রায় ১.৪ বিলিয়ন মানুষ বৃদ্ধি পায়। সূত্র বলছে ২০১৯ থেকে ২০২০ সালে বিশ্বে কর্মসংস্থানের ব্যাপক হ্রাস দেখা দিয়েছিল। কারণ কোভিড-১৯ মহামারিতে হঠাৎ অর্থনীতিতে একটি বড় ধাক্কা আসে। অন্যদিকে ৪ জুলাই, ২০২৪ প্রকাশিত আরেক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২৩ সালে বিশ্বজুড়ে প্রায় ৩.৫ বিলিয়ন শ্রমজীবী মানুষ ছিল। ১৯৯১ সালে এই সংখ্যা ছিল ২.২৩ বিলিয়ন। যা এক বিলিয়নেরও বেশি। ২০২৩ সালে এই শ্রমজীবীদের মধ্যে প্রায় ২.১ বিলিয়ন পুরুষ এবং ১.৪ বিলিয়ন নারীকর্মী।

এসব শ্রমজীবী অধিকাংশ কোনো না কোনো পেশার সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করেছেন। ফলে বাঁচার তাগিদে নিজের মেধা ও শ্রম বিত্তশালী মানুষদের কাছে লুটিয়ে দিয়ে বিনিময় করেন শ্রম বনাম অর্থের। বিত্তবানরা দিনমজুরের শ্রমের বিনিময়ে নিজের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান প্রসার করতে থাকে। পরিতাপের বিষয় হলো তারা বিনিয়োগ করে ভাগ্য পরিবর্তন করতে সক্ষম হয় আর শ্রমিকরা তাদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে মহাযুদ্ধ চালায় তবু সংসারের অভাব অনটন গোছাতে পারে না। সংগ্রাম করে শ্রমিকদের জীবন পার করতে হয়। অভিযোগ আছে দেশের শ্রমিকরা কোনো সরকারের আমলে শ্রমের সঠিক মূল্যায়ন পায় না। বরং ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে। শ্রমের ন্যায্যতার জন্য যদি কোনো আন্দোলনে নামে তবে সরকারের তোপের মুখে পড়তে হয় মেহনতি শ্রমিকদের।

ওয়ার্ল্ডো মিটার ২০২৫ এর জরিপে ৮ বিলিয়ন ২শ’ ৩১ মিলিয়ন ৬শ’ তেরো হাজার ৭০ জন জনসংখ্যা পৃথিবীতে। প্রতি সেকেন্ডে এই সংখ্যা ওঠানামা করে। তবে ২০২৫ এর এপ্রিল মাসের ৫ তারিখ একটি জরিপে দেখা গেছে, পৃথিবীতে মোট জনসংখ্যা ৮.২ বিলিয়ন। এর আগে অর্থাৎ ২০২২ সালে ছিল ৮ বিলিয়ন। এভাবেই দৈনন্দিন জনসংখ্যা বৃদ্ধির দিকে যাচ্ছে। নানাভাবে মানুষ জীবিকা নির্বাহ করছেন। তুলনামূলক ভাগ্য পরিবর্তনের সংখ্যা একই বারে নগণ্য।

দিনদিন এই জনসংখ্যা বেড়েই চলেছে। জনসংখ্যার বড় অংশ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্ম করে নিজের জীবনের চাহিদা মেটায়। দেখা গেছে, যৌবনকালে কর্মস্থলে যোগদান করে পরে বার্ধক্যে চলে গেছে কিন্তু ভাগ্যের তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। লাগামহীন পরিশ্রম করে যাচ্ছে ভাগ্য উন্নয়নের জন্য। শ্রমিক অবমূল্যায়নের একটি বড় দৃষ্টান্ত সাভারের রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি। যা ইতিহাসের অবিস্মরণীয় একটি দিন শ্রমিকদের জন্য।

বছর ঘুরে এলেই শ্রমিকদের আত্মার চিৎকার বেড়ে যায়। মনের মাঝে পুনরাবৃত্তি হয় তাদের শ্রমের কোনো যথাযথ সম্মান করা হয় না। ন্যায্য পাওনাটুকু মালিকপক্ষ বুঝিয়ে দেয় না। মালিকপক্ষ বড় থেকে আরও বড় হয় শ্রমিকরা সেই নিচুতলার মানুষদের একজন হয়ে বাঁচতে হয়। আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস যা মে দিবস নামেই সবাই জানে।

প্রতি বছর ১ মে বিশ্বজুড়ে দিবসটি উদ্যাপন করা হয়। তাই এটি আন্তর্জাতিক শ্রমিক আন্দোলনের উদযাপন দিবস। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে শ্রমজীবী মানুষ এবং শ্রমিক সংগঠন রাজপথে সংগঠিতভাবে মিছিল ও শোভাযাত্রার মাধ্যমে দিবসটি পালন করেন।

সেই সময় বিশ্বের প্রায় ৮০টি দেশে পহেলা মে জাতীয় ছুটির দিন এবং অনেক দেশে এটি বেসরকারিভাবে পালন করা হচ্ছে। ট্র্যাজেডি কমবেশি সবার জানা আছে তাই এর গভীর পুনরাবৃত্তি করার দরকার আছে বলে মনে হয় না। একটি নেতিবাচক কর্ম দিয়ে অধিকার আদায়ের লড়াই শুরু করে শ্রমিকরা। এর ফলশ্রুতিতে ১৮৮৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে শ্রমিকরা দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজ করার প্রস্তাব নিয়ে আন্দোলন শুরু করে। এ দাবি কার্যকর করতে সময় বেঁধে দিল ১৮৮৬ সালের পহেলা মে পর্যন্ত।

এভাবেই আন্দোলন চলতে থাকে। একাধিকবার মালিকপক্ষের কাছে দাবি জানানো, হয় তবুও কিঞ্চিৎ সাড়া মেলেনি মালিক পক্ষ থেকে। এরপর এই ঘটনা নিয়ে একটি পত্রিকায় আর্টিকেল প্রকাশ হলে বিষয়টি আলোড়ন সৃষ্টি করে। পরে আর কি, যা, হওয়ার হলো বিদ্রোহ চরমে উঠল। শিকাগো শহর হয়ে উঠে প্রতিবাদ-বিদ্রোহের একটি মূল মঞ্চ। ফলে পহেলা মে যতই ঘনিয়ে আসছিলো, উভয় পক্ষের সংঘর্ষ স্থায়ী হয়ে উঠল। মালিক-বণিকরা প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে দিলো।

পুলিশ আগে থেকেই শ্রমিকদের ওপর নির্মম নির্যাতন চালায়। শুধু তাই নয় শ্রমিকদের ওপর গুলি চালাতে ব্যবসায়ীরা পুলিশকে বিশেষ অস্ত্র কিনে দেয়। সেই সময় পহেলা মে যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় তিন লাখ শ্রমিক কাজ ফেলে রাস্তায় নেমে আসেন এভাবে আন্দোলন আরও ঘনীভূত হয়ে উঠে।

একপর্যায়ে শ্রমিকদের শ্রমের বিভাজন একটা সীমাবদ্ধতায় আসে। কিন্তু শ্রমের আসল মূল্য অনেকটা আগের মতই রয়ে যায়। অবমূল্যায়নের গণ্ডির মধ্য থেকে শ্রমের আসল মূল্য উঠে আসতে পারেনি। যেন লড়াই করেও শ্রমিকদের জয় নিশ্চিত হয়নি বহু বছর তো পার হয়ে গেলো। আর কবে শ্রমিকরা শ্রমের আসল মূল্য পাবে।

লেখক : গণমাধ্যমকর্মী।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়